৭০ লক্ষ বছর আগেই দু-পায়ে হাঁটার নিদর্শন! মানুষের নতুন পূর্বপুরুষের সন্ধান

আজ থেকে প্রায় ৫০-৬০ লক্ষ বছর আগের কথা। পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছিল হোমিনিস গোত্রের প্রাণীরা। দু-পায়ে দাঁড়ানোর কৌশল আয়ত্ত করে তারাই। পরবর্তীতে তাদের বিবর্তনেই জন্ম নেয় মানুষ। এমনটাই আমরা পড়ে এসেছি এতদিন। তবে এবার সময়সীমা পিছিয়ে গেল আরও খানিকটা। মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদে খুঁজে পাওয়া একটি প্রাচীন জীবাশ্মের বিশ্লেষণে গবেষকরা জানাচ্ছেন, ৭০ লক্ষ বছর আগেই হাঁটতে শিখেছিল মানুষের পূর্বপুরুষরা (Ancestors Of Human)। অন্তত তারা হাঁটার অভ্যাস করত বলেই ধারণা গবেষকদের। 

সাহেলানথ্রোপাস চাদেনসিস। প্রাচীন এই প্রজাতিটিই প্রথম দ্বিপদবাদ (Bipedalism) বা দু-পায়ে দাঁড়ানো ও হাঁটার কৌশল রপ্ত করেছিল বলেই অভিমত বিজ্ঞানীদের। তাদের থেকেই ক্রমশ দু-পায়ে দাঁড়াতে থেকে শিম্পাজি বা অন্যান্য বানর প্রজাতিরা। সম্প্রতি, বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞান পত্রিকা ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্রটি। গবেষণায় যুক্ত ছিলেন ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি ডি পোয়েটার্সের গবেষকরা। 

তবে আজ নয়। ২০০১ সালের কথা। চাদে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল বেশ কিছু প্রাচীন জীবাশ্ম। সম্পূর্ণ দেহাংশ না পাওয়া গেলেও শিরদাঁড়া, কোমর, হাত ও পায়ের হাড় পেয়েছিলেন নৃবিজ্ঞানীরা। ভিন্নভাবে পাওয়া গিয়েছিল খুলিও। তবে সেগুলিও এই একই প্রাণীর কিনা, নিশ্চয়তা ছিল না। অবশ্য এই নতুন প্রাণীটি যে শিম্পাঞ্জি নয়, তার প্রমাণ মিলেছিল আগেই। তবে গবেষকদের বিস্মিত করে দিয়েছিল এই অদ্ভুত প্রাণীটির হাত ও পায়ের হাড়ের গঠন। আর তার কারণ এই প্রাণীটির দেহে ক্রেনিয়ানের অবস্থান। শিরদাঁড়া ও মস্তকের সংযোগস্থল এই প্রানীর দেহে অবস্থিত লম্বভাবে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, চার পায়ে হাঁটা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ হয়ে ওঠার কথা এই প্রাণীটির। তবে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবেই সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। এবার সেই অসম্পূর্ণ কাজকেই শেষ করলেন ফরাসি গবেষকরা। নিশ্চিত করলেন এই প্রাণীটিও আদতে হোমিনিস।

গবেষকদের অভিমত, ৭০ লক্ষ বছর আগে ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে পৃথিবীর জলবায়ু। আফ্রিকার বুক থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করে চিরসবুজ অরণ্য। ফলে খাদ্য সংকট দেখা দেয় বৃক্ষবাসী প্রাণীদের। বিশেষত, বানর গোত্রের প্রাণীদের খাদ্য সংগ্রহ করতে দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে হত সেই-সময়। দেহের ভার বেশি হওয়ায়, এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে শক্তিরও প্রয়োজন হত বিস্তর। দৈহিক শক্তি বাঁচানোর জন্যই তাই দু-পায়ে হাঁটার অভ্যাস করে তারা। অবশ্য তাতে কমে যায় তাদের গতি। দেহের ভারসাম্য বজায় রাখাও চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। 

গবেষকদের অনুমান, চাদে খুঁজে পাওয়া এই প্রাচীন প্রজাতিটি দু-পায়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি কখনও চার পা-ও ব্যবহার করত। তাদের দেহের গঠন জানাচ্ছে তেমনটাই। ফলে, বলা যেতেই পারে এই প্রাচীন প্রজাতি দু-পায়ে হাঁটার অভ্যাস যে অভ্যাস শুরু করেছিল তা পরিপূর্ণতা পায় পরবর্তী হোমিনিস প্রজাতির মধ্যে…

Powered by Froala Editor