চোখের সামনে বদলে যাচ্ছে জলবায়ু। গ্রীষ্মকাল আরও উষ্ণ হয়ে উঠছে। বাড়ছে শীতের শৈত্যপ্রবাহও। আর এই অস্বাভাবিক আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক প্রজাতিই। কিন্তু শুধু কি বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদরাই এই সংকটের শিকার? পরিসংখ্যান বলছে, বদলে যাওয়া আবহাওয়ার কারণে মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও কম নয়। শুধু ভারতেই এই সংখ্যাটা বার্ষিক ৭ লক্ষের বেশি। এমনটাই জানাচ্ছে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান।
সম্প্রতি ‘দ্য ল্যান্সেট প্ল্যানেটারি হেলথ’ পত্রিকায় প্রকাশির একটি গবেষণাপত্রে মানুষের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের নেতৃত্বাধীন বিজ্ঞানীদের একটি দল। আর সেই পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে পৃথিবীর নানা দেশে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাও। ৪৩টি দেশের মধ্যে আছে ভারতের সমীক্ষার রিপোর্টও। আর সেই তথ্য বলছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে দেশে জলবায়ুর প্রভাবে গড়ে প্রতি বছর ৭৪০০০০ মানুষ মারা গিয়েছেন। এর মধ্যে অবশ্য ঠান্ডার কারণে মৃত্যুর সংখ্যাটাই বেশি।
ভারতে প্রতি বছর শৈত্যপ্রবাহের কারণে মৃত্যুর সংখ্যাটা গড়ে সাড়ে ৬ লক্ষের বেশি। অন্যদিকে অত্যাধিক গরমে মৃতের সংখ্যা বার্ষিক ৮৭ হাজারের কিছু বেশি। তবে এক্ষেত্রে দুটি বিষয়কে আলাদাভাবে দেখতে রাজি নন গবেষকরা। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ একই। গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে প্রতিবছর বাড়ছে পৃথিবীর উষ্ণতা। গড়ে এক দশকে ০.২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। আর এই বদলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না মানুষের শরীর। সারা পৃথিবীতে বার্ষিক মৃত্যুর প্রায় ৯.৬ শতাংশের জন্যই দায়ী এই জলবায়ু পরিবর্তন। এও এক ধরণের অতিমারী বলেই মনে করছেন মোনাস ইউনিভার্সিটির গবেষকরা।
অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বার্ষিক মৃত্যুর হার গত ২০ বছরে কিছুটা নিম্নমুখী বলেই জানিয়েছেন গবেষকরা। শৈত্যপ্রবাহের মৃত্যুর সংখ্যা ০.৫১ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে তাপপ্রবাহে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ০.২১ শতাংশ। ফলে সার্বিকভাবে মৃত্যুর সংখ্যা সামান্য হলেও কমেছে। কিন্তু এতে আশা জাগার কোনো কারণ নেই বলেই মনে করছেন গবেষকরা। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের শরিক হয়েই হানা দিচ্ছে নানা মারণ রোগ। আর সেইসবের প্রভাবেও মৃত্যু হচ্ছে বহু মানুষের। গত ২০ বছরে এমন রোগের প্রাদুর্ভাবও বেড়েছে অনেকটাই। তাই সব মিলিয়ে এখনই সচেতন না হলে আগামী দিনে ভয়ঙ্কর বিপদ অপেক্ষা করে আছে। একের পর এক গবেষণাপত্রে এভাবেই সতর্ক করছেন বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন
ঠুড়গা পাওয়ার স্টোরেজ প্রকল্পে ধ্বংস হবে প্রস্তরযুগের প্রত্নক্ষেত্রও, সরব পরিবেশকর্মীরা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
হিরের খনির জন্য ২ লক্ষ বৃক্ষচ্ছেদনের পরিকল্পনা, দেশজুড়ে সরব পরিবেশকর্মীরা