ক্রমাগত এই পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক বন্য প্রাণী। আর এই প্রক্রিয়া যে গত ৫০ বছরে অনেকটাই ত্বরান্বিত হয়েছে, সেকথা আমরা সবাই জানি। একের পর এক প্রজাতির বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার খবরও এসেছে এই সময়কালের মধ্যে। কিন্তু ঠিক কতগুলি প্রাণী মানুষের আগ্রাসনের শিকার হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এতদিন বেশ কঠিন ছিল। কারণ সমস্ত বন্য প্রাণীর মোট সংখ্যার হিসাব একটু কঠিন। যদিও দীর্ঘদিন ধরে এই পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে চলেছে লিভিং প্ল্যানেট ইন্ডেক্স। আর সেই পরিসংখ্যান থেকেই দেখা গিয়েছে গত ৫০ বছরে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমেছে ৬৮ শতাংশ।
ডব্লিউডব্লিউএফ ইন্টারন্যাশানাল এবং জুলজিক্যাল সোসাইটি অফ লন্ডনের যৌথ উদ্যোগে গৃহীত এই পরিসংখ্যানে ১৯৭০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪ হাজার প্রজাতির প্রাণীর মোট সংখ্যার হিসাব রাখা হয়। সেইসঙ্গে তাদের বাসস্থানের হিসাবও রাখা হয়। সেই পরিসংখ্যান বলছে এই ৫০ বছরে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে জলাভূমি অঞ্চলের প্রাণীরা। সেখানে মাছ এবং জলজ প্রাণীর সংখ্যা তো কমেছেই, সেইসঙ্গে পাখির সংখ্যা এবং বেশ কিছু উভচর প্রাণীর সংখ্যাও কমেছে। আর সেই পরিমাণটা প্রায় ৮৭ শতাংশ। আসলে মোট জলাভূমির পরিমানই কমেছে ৮৫ শতাংশ।
এই সংকট যে শুধু বাস্তুতন্ত্রের সংকট নয়, সেই কথাটাই জোর দিয়ে দাবি করছে লিভিং প্ল্যানেটের এই পরিসংখ্যান। দেখা গিয়েছে এই ৫০ বছরে ১৯ লক্ষ বর্গকিলোমিটার স্থলভাগ যেকোনো প্রাণীর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ১.৩ বিলিয়ন টন খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। আর সব মিলিয়ে শুধু আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ ট্রিলিয়ন ডলার মার্কিন ডলার। সেইসঙ্গে বেড়েছে মহামারীর প্রবণতাও। প্রকৃতির সংকট যত বাড়বে ততই ভয়ঙ্কর মহামারীর জন্ম হবে বলে জানাচ্ছে রিপোর্ট। তাই এই সংকট সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক এবং অবশ্যই সামাজিক। অথচ তার মোকাবিলায় নানা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তার গতি অনেকটাই কম। আদৌ কি এভাবে বাঁচানো যাবে অসংখ্য প্রাণী তথা মানুষের অস্তিত্বকে? এই প্রশ্নের উত্তরই এখন খুঁজে চলেছেন সারা পৃথিবীর অসংখ্য বিজ্ঞানী।
Powered by Froala Editor