গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের সৌজন্যেই দ্রুত ক্ষয়ীভূত হচ্ছে নরওয়ের বরফের স্তূপ। আর এই দ্রুত বরফগলনই তুলে আনছে অতীতের স্মৃতিদাগকে। তুলে আনছে প্রাচীন মানব সভ্যতার অস্তিত্বের প্রমাণ। নরওয়ের জোটুনহেইমেন পর্বতমালার কাছে সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিকরা অনুসন্ধান পেলেন কয়েক হাজার বছরের পুরনো তির।
২০০৬ সালে সূত্রপাত হয়েছিল এই রহস্যের। প্রত্নতত্ববিদ রেদার মার্সটেইন ওই অঞ্চলে প্রথম খুঁজে পেয়েছিলেন একটি চামড়ার জুতো। হিমবাহের গলনের ফলেই তা প্রকাশ্যে এসেছিল। প্রাথমিকভাবে এই জুতো ভাইকিং যুগের বলেই ধারণা হয়েছিল তাঁর। তবে অঞ্চলটি ভালোভাবে পরিদর্শন করতেই চমকে ওঠেন তিনি। খুঁজে পান সব মিলিয়ে ৬৮টি প্রাচীন তির। যাদের কোনোটা প্রস্তরযুগের, কোনোটা আবার মধ্যযুগীয়। কার্বন-ডেটিং জানান দেয় কয়েকটি নমুনার বয়স সেখানে ৬০০০ বছর পর্যন্ত।
মূলত পাথরের তৈরি এই তিরগুলি অটিজি সভ্যতারও প্রায় ৮০০ বছর আগে ব্যবহৃত বলেই ধারণা রেদারের। তবে এই অঞ্চলে প্রাপ্ত অধিকাংশ তীরগুলিরই ক্ষয় হয়েছে। বরফের গলনে হিমবাহের প্রবাহের জন্যই এই ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার বরফের মধ্যেই সুসজ্জিত অবস্থায় বেশ কিছু তির সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। এই ঘটনা যেন জানান দিচ্ছে নরওয়ের তুষারাবৃত এই প্রান্তরেই একসময় শিকার করে বেড়াত অজানা সভ্যতার সদস্যরা।
তীরের সঙ্গেই রেনডিয়ার, অ্যান্টিলারের হাড় এবং অন্যান্য দেহাংশের তৈরি জিনিসও উদ্ধার করেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে হ্যালোসিন পত্রিকায়। আর নরওয়ের প্রাচীন মানব সভ্যতার বিষয়ে এই নতুন তথ্যই যেন রহস্যের হাতছানি দিচ্ছে গবেষকদের। এক্ষুনিই যাতে পুরো অঞ্চলটি পর্যটকদের মূল আকর্ষণ না হয়ে ওঠে, তার জন্য অবস্থানের ব্যাপারে সমস্ত তথ্যই গোপন রাখছেন বিজ্ঞানীরা। চাইছেন আরও খানিকটা খুঁতিয়ে দেখতে নরওয়ের এই প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট। নতুন প্রমাণ হদিশ দিতে পারে ভাইকিংদের সঙ্গে এই সভ্যতার সম্পর্ককেও, আশাবাদী তাঁরা...
Powered by Froala Editor