বিগত দিনগুলোয় রেল নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় চলছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভারতীয় রেলের একটা অংশকে বেসরকারিকরণ করা হবে। তাই নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। তারই মধ্যে রেলের পরিকাঠামো নিয়ে নিত্য নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে রেল মন্ত্রক। তাঁদের সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী, লকডাউন পরবর্তী সময়ের ট্রেন টাইমটেবিলের আমূল পরিবর্তন আনা হবে। আর সেজন্যই গোটা দেশজুড়ে অন্তত ছয় হাজার স্টপেজ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
শুধু বাংলা নয়, প্রায় গোটা দেশেই ট্রেন লেটের সমস্যায় ভুক্তভোগী যাত্রীরা। একেই বিশাল সংখ্যক মানুষ এই পরিবহন মাধ্যমের ওপর নির্ভর করেন। তার ওপর ট্রেন আসতে দেরি করলে ভিড় এমনিই বেড়ে যায়। কখনও রাজনৈতিক কর্মসূচি ও অবরোধের প্রভাবও ট্রেনের স্বাভাবিক টাইমটেবিলকে নষ্ট করে। একটি ট্রেন লেট করলে পরবর্তী ট্রেনের ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়বে। কিন্তু রেল মন্ত্রকের দাবি, এসবের থেকেও বড়ো কারণ হল ‘অলাভজনক’ স্টেশন ও স্টপেজগুলো। যেখানে দিনে ৫০ জন যাত্রীও ওঠা-নামা করেন না। সেখানে ট্রেন দাঁড়ালে সময় নষ্ট হচ্ছে। কাজেই যদি সেই স্টপেজগুলো না থাকে, তাহলে সময়ের সমস্যাটা মিটবে বলে তাঁদের ধারণা। তাই দেশজুড়ে অন্তত ৬০০০ স্টপেজ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর। সেইসঙ্গে আইআইটি মুম্বইয়ের সাহায্য নিয়ে তৈরি করা আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত টাইমটেবিলে যাত্রীদেরও অনেক সুবিধে হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
তবুও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। যদি এই স্টপেজগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, যে অল্প সংখ্যক যাত্রীও যাতায়াত করতেন তাঁদের কী হবে? ভারতীয় রেল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থেকে দেশবাসীকে পরিষেবা দেয়। এটাই তাঁদের কাজ। সেখানে ‘অলাভজনক’ তকমা দিয়ে একসঙ্গে কয়েক হাজার স্টপেজকে এভাবে ছেঁটে ফেলতে কি পারে একটি সরকারি সংস্থা? সেই কয়েক হাজার স্টপেজের যাত্রীদের কী হবে? নাকি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে বেসরকারি মনোভাবই কাজ করছে? আর সেই স্টপেজ থাকাকালীনও কি ট্রেন টাইমটেবিল মেনে চলেছে? বরং স্টেশনে যেদিন কোনো ট্রেন আগে ঢুকত বা ঠিক সময় ঢুকত, যাত্রীরাই অবাক হত। এমন মনোভাব তো একদিনে তৈরি হয়নি। এর ব্যাখ্যা কী? জনসংখ্যার হিসেবে ট্রেনও বাড়েনি; ফলে ভিড় বেড়েই চলেছে। তার ওপর রাজনৈতিক আস্ফালন তো রয়েছেই। প্রশ্ন রয়েছে অনেক। উত্তর আছে কি?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
রেলের বেসরকারিকরণ হোক বা না-হোক, হকারদের ভাগ্য বদলাবে কি?