শহরের উপকণ্ঠেই আস্ত একটা জঙ্গল। আর তার মধ্যেই বাস কতগুলি আদিবাসী পরিবারের। ভারতের বাণিজ্যনগরী মুম্বাইতে গেলেই দেখতে পাওয়া যাবে এমন দৃশ্য। কিছুদিন আগেও হয়তো এমন একটা জায়গায় এসে বিরক্ত লাগত নাগরিক সভ্যতায় অভ্যস্ত মানুষের। কিন্তু সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় বনভূমি সম্বন্ধে মানুষের চিন্তাভাবনা বদলাচ্ছে। আর তারই পরিচয় পাওয়া গেল মহারাষ্ট্র সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণায়। বনভূমি পরিষ্কার করে উন্নয়নের কাজ তো করা হবেই না, বরং সংরক্ষণ করা হবে ৬০০ একর এলাকাকে। সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি এবং প্রতিবাদের প্রতিফলন এই ঘোষণা।
শহরতলি এলাকায় সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশানাল পার্কের কাছেই আছে ৬০০ একরের এই বনভূমি। অবশ্য কিছুদিন আগেই নগর উন্নয়ন পরিষদ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বনভূমি কেটে ফেলা হবে। স্থানীয় আদিবাসীদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতিতে সন্তুষ্ট ছিলেন না স্থানীয় আদিবাসীরা। জঙ্গলের সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিনের আত্মিক বন্ধন। আর তাঁদের প্রতিবাদের পাশে এসে দাঁড়ান শহরের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য রাজ্য মন্ত্রিসভার মিটিং ডাকেন মুক্ষমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। আর সেই মিটিং-এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বনভূমি ধ্বংস করে সমস্ত উন্নয়নের পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে।
দীর্ঘ প্রতিবাদের ফলে সাফল্য পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই খুশি স্থানীয় অধিবাসীরা। সেইসঙ্গে রাজ্য মন্ত্রিসভার তরফ থেকেও জানানো হয়েছে, আগামীদিনে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন প্রকল্পের মডেল তুলে ধরবে মহারাষ্ট্র সরকার। আর তার শুরু হল এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়েই। দেশের মধ্যে মুম্বইতেই প্রথম নাগরিক অঞ্চলের মধ্যেও সংরক্ষণের তালিকায় আসতে চলেছে আস্ত একটি বনভূমি। তবে এই মডেল যদি অন্যান্য এলাকার প্রশাসনকেও প্রভাবিত করতে পারে, তার থেকে ভালো আর কিছুই হতে পারে না। নাহলে আগামী দিনে হয়তো গাছ, পাখি আর জীবজন্তুকে চিনতে হবে শুধুই বইয়ের ছবিতে আর চিড়িয়াখানায় খাঁচার মধ্যে। মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির আত্মিক যোগাযোগটাই হারিয়ে যাবে কংক্রিটের জঙ্গলে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বিক্ষিপ্ত বনসৃজন নয়, অরণ্যচারীদের হাতেই দেওয়া যেতে পারে ‘আশ্রয়’রক্ষার দায়িত্ব