ছোট্ট এক কিশোরী দাঁড়িয়ে রয়েছে দরজার সামনে। হাতে ধরা পিচবোর্ডের পোস্টার। তাতে জ্বল জ্বল করছে পুনর্ব্যবহারের বার্তা। এমন দৃশ্য অবাক করার মতোই। পৃথিবীকে দূষণমুক্ত রাখতে এইটুকু কিশোরীর সচেতনাবোধের কাছে বাকরুদ্ধ হতেই হয়। তবে শুধুই কি এই বার্তা দিতে হাজির হয়েছে সে? না, বরং সে সদর দরজায় হাজির হয়েছে বাতিল ইলেকট্রনিক সামগ্রী সংগ্রহের জন্য।
হ্যাঁ, এমনই এক বিস্ময়কর কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তামিলনাড়ুর ৬ বছর বয়সী কিশোরী ভুয়ানা (Bhuanya)। প্রকৃতি ও পৃথিবীকে বাঁচাতে, ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে নিজেই ই-বর্জ্যের মোকাবিলায় নেমেছে একরত্তি শিশু। প্রথম শ্রেণির ছাত্রী হয়েও একাধিক পরিবেশ সংক্রান্ত এবং দাতব্য প্রকল্পে জড়িয়ে পড়েছে সে।
ইলেকট্রনিক সামগ্রীর অন্যতম উপাদান হল সিলিকন। ই-বর্জ্যে এই সিলিকনের উপস্থিতিই ভয়ঙ্করভাবে দূষিত করে তোলে পরিবেশকে। একদিকে যেমন তা মৃত্তিকাদূষণ ঘটায়, তেমনই খাদ্যের সঙ্গে সিলিকনের কণা প্রবেশ করে বিভিন্ন প্রাণীর দেহেও। ফলে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাস্তুতন্ত্র। পানীয় জলে সিলিকন মেশার কারণে প্রভাব পড়ে মানবদেহেও।
সব মিলিয়ে ইলেকট্রনিক সামগ্রী কাজ করা বন্ধ করে দেওয়ার পর তাই বিশেষ নির্দেশিকা মেনেই জমা করা হয় পৃথকভাবে। যদিও এই নিয়মাবলী বিন্দুমাত্র উল্লেখিত থাকে না ই-সামগ্রীর বাক্সে। হয় না কোনো প্রচার। ই-বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণের জন্যও আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। তাই নিজেই ই-বর্জ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ময়দানে নেমেছে ভুয়ানা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাতিল ইলেকট্রনিক সামগ্রী সংগ্রহ করে পুনর্ব্যবহার কেন্দ্রে পৌঁছে দেয় এই কিশোরী। সেইসঙ্গে চলে সচেতনতামূলক প্রচার। গৃহস্থালির সাধারণ আবর্জনার সঙ্গে যাতে ই-বর্জ্যকে মানুষ মিশিয়ে না ফেলেন, সেই বার্তায় দেয় সে।
তবে এখানেই শেষ নয়। ই-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ছাড়াও জৈব চাষ এবং দুঃস্থ শিশুদের বই প্রদানের মতো কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে রয়েছে ভুয়ানা। নিজের পড়া প্রায় দেড়শোটি বই দান করেছে পথের শিশুদের। আগামীতে সাফাইকর্মীদের কিট প্রদানের পরিকল্পনাও করে রেখেছে ভুয়ানা। মাত্র ছ’বছর বয়সে তামিল কিশোরীর এহেন সচেতনতা ও উদ্যোগ রীতিমতো অবাক করে সকলকেই। ভুয়ানার মতো কিশোর পরিবেশকর্মীরাই ভরসা যোগাচ্ছে দূষণমুক্ত ভবিষ্যতের…
Powered by Froala Editor