বছর দশেক আগে তাকে দেখা যেত আগ্রার রাস্তায়। দীর্ঘ পথ ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করত, আর পিচঢালা গরম রাস্তায় হেঁটে হেঁটে পায়ের তলায় পড়েছিল স্থায়ী ফোস্কা। ৫৫ বছরের ফুলকলির মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল একেবারে। একটি চোখের দৃষ্টিও ক্রমশ অস্বচ্ছ হয়ে আসছিল। জন্ম থেকেই যে মালিকের কাছে বেড়ে ওঠা, যার জন্য সারাদিন পরিশ্রম করত ফুলকলি; হাতির স্বাস্থ্যের দিকে সে কোনো নজর দেয়নি। ক্রমশ নিজের চরিত্রই ভুলে গিয়েছিল ফুলকলি। মালিকের তর্জন শুনে রাস্তার মধ্যে ভয়ে কেঁপে উঠত তার শরীর। কিন্তু অবশেষে তার জীবনে পরিবর্তন এল। ফুলকলি কথা জানতে পেরে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করে বনবিভাগ এবং একটি বেসরকারি সংস্থা 'ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস'। সেটা ২০১২ সাল। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত তার বাসস্থান মথুরার এলিফ্যান্ট কেয়ার সেন্টার।
৫৫ বছরের ফুলকলি যখন মথুরায় আসে, তখন থেকেই তার জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। জীবনে প্রথম জলে নামার আনন্দ উপভোগ করেছিল সেদিন। তারপর থেকে যমুনা নদীর ঘাটটাই তার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হয়ে ওঠে। প্রতিদিন বিকালে তার নদীর ধারে ঘুরতে যাওয়া চাইই চাই। কখনো ইচ্ছা হলে নেমে যায় জলের মধ্যে। সেখানে জল ছিটিয়ে খেলা করে। তার একজন প্রিয় সঙ্গীও জুটে গিয়েছে সেখানে। তার নাম মায়া, মথুরায় আসার আগে সার্কাসে খেলা দেখাত সে। তার অবস্থাও ছিল একইরকম। কিন্তু ক্রমশ বনের পরিবেশে থাকতে থাকতে শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে সুস্থ হয়ে উঠছে প্রত্যেকেই।
আট বছর ধরে নিয়মিত চিকিৎসার ফলে এখন ফুলকলির দৃষ্টিশক্তি আবার ফিরে এসেছে। তার পায়ের নিচের ফোস্কাও আর নেই। ৪৫০০ কিলোগ্রাম ওজনের ফুলকলি এখন সবদিক থেকেই পুরোপুরি সুস্থ। মথুরার কেয়ার ইউনিটে থাকা মহিলা হাতিদের মধ্যে ফুলকলি সবচেয়ে লম্বা। তার মতোই অন্য অনেক হাতি নতুন জীবন ফিরে পাচ্ছে 'ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস'এর তত্ত্বাবধানে। দেশের বিপন্ন প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে তাঁদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন অনেকেই। বনবিভাগের পক্ষ থেকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবেই মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে জঙ্গলের বুকে বেড়ে উঠুক অন্য প্রাণীরাও।