বন্ধ পেনশন, সংকটে ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার ৫ হাজার বিধবা

দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ৩৭ বছর। আজও গ্যাস দুর্ঘটনার ভয়ঙ্কর স্মৃতি বুকে নিয়ে বেঁচে রয়েছে মধ্যপ্রদেশের ভূপাল শহর। সঙ্গে আছে স্বজন হারানোর স্মৃতি। তবে এটুকুই সব নয়। ১৯৮৪ সালের গ্যাস দুর্ঘটনা বহু পরিবারকে আর্থিকভাবে সম্বলহীন করে তুলেছিল। বিশেষ করে যে সমস্ত কারখানা শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারগুলি। সংসারে উপার্জনের রাস্তা নেই কিছুই। অবশেষে সরকারের বিশেষ পেনশনের ব্যবস্থায় খুশি হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বিগত ১৮ মাস ধরে সেই পেনশনও বন্ধ। কেন পেনশন চালু করা হচ্ছে না, তারও কোনো সদুত্তর নেই। আর এই সবকিছু নিয়েই ক্ষোভ জমা হয়েছে শহরবাসীর মধ্যে।

১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ভূপালের ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেডের কারখানা থেকে বিষাক্ত মিথেন গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। সরকারি পরিসংখ্যানে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজারের কাছাকাছি। আর বিষাক্ত গ্যাসের কারণে শারীরিক ক্ষতি হয়েছিল কয়েক লক্ষ মানুষের। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ শিল্প-দুর্ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত ভূপালের এই ঘটনা। এই দুর্ঘটনায় অন্তত ৫ হাজার মহিলা তাঁদের স্বামীকে হারিয়েছিলেন। আর তাঁরাই ছিলেন পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস। অসহায় সেই মহিলাদের দিকে দীর্ঘদিন ফিরেও তাকায়নি সরকার। অবশেষে ২০১০ সালে তাঁদের জন্য বিশেষ পেনশনের ব্যবস্থা করা হয়। তাও মাত্র মাসে ৫০০ টাকা। ঠিক হয় পেনশনের ৭৫ শতাংশ খরচ দেবে কেন্দ্র। এবং ২৫ শতাংশ দেবে মধ্যপ্রদেশ সরকার। কিন্তু সময় পেরিয়ে যায়। প্রতিশ্রুতি মতো কোনো অর্থই হাতে আসে না কারোর।

প্রাথমিকভাবে কয়েক মাস পেনশন দেওয়া পর তা বন্ধ হয়ে যায়। আবার লাগাতার সমালোচনার মধ্যে পড়ে ২০১৭ সালে প্রক্রিয়াটি পুনরায় চালু করে মধ্যপ্রদেশ সরকার। পাশাপাশি মাথাপিছু বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ মাসিক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকাও করা হয়। কিন্তু ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসেই আবারও বন্ধ হয়ে যায় পেনসন। এর মধ্যে সরকার পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। বর্তমান শাসকদলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যেও বারবার উঠে এসেছে পেনসন চালু করার প্রসঙ্গ। কিন্তু তারপর কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ তুলছেন শহরবাসী।

সামান্য এই সরকারি সাহায্যটুকুই আজও অনেকের সারা মাসের একমাত্র আয়। এটুকুর উপরেই বেঁচে থাকা। এর মধ্যে করোনা অতিমারীর মতো ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক দুরাবস্থার সময়েই বন্ধ হয়ে যায় সেই রোজগার। আবেদন-নিবেদনে কাজ না হলে শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের পথই বেছে নিতে হবে বলে মনে করছেন অসহায় মহিলারা। বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা বলতে তো আর এটুকুই করতে পারেন তাঁরা।

আরও পড়ুন
বাঁকুড়ায় উন্নয়নের কোপে কয়েকশো তালগাছ, প্রতিবাদে একজোট গ্রামবাসীরা

তথ্যসূত্রঃ Bhopal Gas Tragedy Widows: Over 5,000 Women Are Still Fighting For Subsistence Pension Of Rs 1,000, The Logical Indian

আরও পড়ুন
অধিকারের দাবিতে লড়াই আদিবাসীদের, প্রতিবাদের নতুন মঞ্চ ‘বাস্তারের শাহীনবাগ’

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
টাইটানিক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ছোট্ট একটি চাবি! গাফিলতি নাকি অপমানের প্রতিশোধ?