বিলুপ্তির মুখে ৫০ শতাংশ কুমির ও কাছিম, জানাচ্ছে গবেষণা

নানা প্রতিকূল পরিবেশেও কোনোরকমে বেঁচে থাকার মতো ব্যবস্থা করে নিতে পারে সরীসৃপরা। এমন একটা ধারণা দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত। আর তাই বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্রের সংকটের মধ্যেও সরীসৃপের প্রজাতিদের নিয়ে খুব বেশি আলোচনা চোখে পড়ে না। এর আরও একটা কারণ অবশ্য রয়েছে। বেশিরভাগ সরীসৃপ প্রজাতি যেমন দুর্গম অঞ্চলে বসবাস করে, সেখানে পৌঁছে তথ্য সংগ্রহ করার কাজটা বেশ কঠিন। তবে এবার একটি গবেষণাপত্রে সরীসৃপদের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে প্রকাশিত হল দীর্ঘ রিপোর্ট। তবে তা একেবারেই আশাব্যঞ্জক নয়, সে-কথা বলাই বাহুল্য। পাখি, উভচর বা স্তন্যপায়ীদের থেকে তাদের সংকট কোনো অংশে কম নয়। আর কুমির এবং কাছিমের প্রজাতির ৫০ শতাংশই রয়েছে বিলুপ্তির মুখে। ফলে তাদের বাঁচাতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

সাধারণত জীববৈচিত্র ধ্বংস হওয়ার কারণ হিসাবে বারবার জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলা হলেও সরীসৃপের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন মূল কারণ নয় বলেই দাবি করছে ‘কনজার্ভেশন’ পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি। বরং মুখ্য কারণ হিসাবে গবেষকরা দায়ী করছেন মানুষকেই। প্রথমত, মূল্যবান চামড়ার সামগ্রী এবং অন্যান্য কাজে কুমির ও কচ্ছপ শিকার বেড়ে গিয়েছে ভীষণভাবে। তাছাড়া এইসব প্রাণীরা সাধারণত জলাভূমি অঞ্চলে বসবাস করে। নগরায়ণের লক্ষ্যে সেইসব জলাভূমিও বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে। ফলে বাসস্থান হারাচ্ছে সরীসৃপরা। সারা বিশ্বের ১০ হাজারের বেশি প্রজাতির উপর সমীক্ষা চালিয়ে মোটামুটি সব ক্ষেত্রেই একই কারণ প্রত্যক্ষ করেছেন গবেষকরা। সব মিলিয়ে সরীসৃপদের ২১ শতাংশ বিলুপ্তির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে কুমিরের সমস্ত প্রজাতির ৫৮ শতাংশই সংকটে রয়েছে। কাছিমের প্রজাতিগুলির মধ্যে ৫০ শতাংশ সংকটাপন্ন।

তবে নগরায়ণ এবং শিকার মূল কারণ হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণটিকেও একেবারে বাদ দিতে রাজি নন গবেষকরা। দেখা গিয়েছে, জলবায়ু যত উষ্ণ হচ্ছে, পুরুষ সরীসৃপদের প্রজনন ক্ষমতা ততই কমে আসছে। ফলে বংশবিস্তার ব্যাহত হচ্ছে। এই সংকটের হাত থেকে বাঁচার উপায় একটাই জলাভূমি এবং বনভূমি রক্ষা করা এবং কার্বন নিঃসরণ কমানো। বাস্তবে এই দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া গেলে সমস্ত ধরণের জীব প্রজাতিই সুরক্ষিত হতে পারে। কিন্তু সেই কাজটাই কত তাড়াতাড়ি বা সফলভাবে করা সম্ভব, তাই নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানী থেকে পরিবেশকর্মী সকলেই।

Powered by Froala Editor