দেশব্যাপী লকডাউনের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিকল। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো পথদুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমনটা ভাবতে পারেননি কেউই। তবুও গতকাল শেষরাতে একটি ট্রাক উল্টে পড়ে মধ্যপ্রদেশের একটি গ্রামে। যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ২০ জন পরিযায়ী শ্রমিক। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৫ জন। বাকিরা আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
দিন দুয়েক আগেই মধ্যপ্রদেশে ঘটে গিয়েছে আরেকটি দুর্ঘটনা। মালবাহী ট্রেনের চাকার নিচে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁরা জালনা শহর থেকে রেললাইন ধরে নিজেদের গ্রামের দিকে রওয়ানা হয়েছিলেন। আর তারপরেই ঘটল আরেকটি ঘটনা। ট্রাকগাড়ির ২০ জন যাত্রী হায়দ্রাবাদে শ্রমিকের চাকরি করতেন। কিন্তু মার্চ মাস থেকে চলতে থাকা লকডাউনের ফলে খাদ্য এবং আশ্রয়ের অভাবে রীতিমতো বিপাকে পড়েছিলেন। দেশের সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকের অবস্থাই তো এমন। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তাঁদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হলেও বাস্তবে এর সুযোগ পাচ্ছেন না অনেকেই। ফলে বাধ্য হয়ে নিজেরা গাড়ি চালিয়ে রওনা হয়েছিলেন ২০ জন শ্রমিক। তাঁদের বেশিরভাগের বাড়ি মধ্যপ্রদেশের ঝাঁসি শহরে। বাকিরা যাচ্ছিলেন উত্তর প্রদেশের একটি গ্রামে।
হায়দ্রাবাদ থেকে রওনা হয়ে অবশেষে মধ্যপ্রদেশের ভূপাল শহর পর্যন্ত নির্বিঘ্নে আসতে পেরেছিলেন তাঁরা। কিন্তু এর পরেই নরসিংহপুর গ্রামের কাছে হঠাৎ গাড়ি উল্টে যায়। শেষরাতে ঘটনা ঘটায় তা লক্ষ করেননি কেউই। সকালে গাড়িটি উল্টানো অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়। এবং দেখা যায় ৫ জন আরোহী ইতিমধ্যে মারা গিয়েছেন। বাকিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁদের অবস্থাও আশাঙ্কাজনক। উপরন্তু, তাঁদের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। দুজন আহত ব্যক্তির মধ্যে তার উপসর্গও ফুটে উঠেছে। ফলে আহত ব্যক্তিদের আদৌ বাঁচানো যায় কিনা, সেদিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই।
সারা দেশে ৬০ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটিয়েছে করোনা ভাইরাস। সংক্রমণের ফলে মারা গিয়েছেন ১৯ হাজারের বেশি মানুষ। আর সেইসঙ্গে বহু মৃত্যুর কারণ দারিদ্র্য এবং অনাহার। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। লকডাউনের ফলে কাজের সংস্থান হারিয়েছেন। আবার বাড়ি ফেরার উপযুক্ত উপায়ও নেই। ফলে অনেকেই রওয়ানা হচ্ছেন পায়ে হেঁটে বা বিশেষ ঝুঁকি নিয়ে। প্রবাসী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকার নিলেও তার সুফল পাচ্ছেন না অনেকেই। নাহলে হয়তো এতগুলো অকস্মাৎ মৃত্যু আটকানো সম্ভব হত।