দুর্গম পাহাড়ি উপত্যকায় ঘেরা রাজ্য হিমাচলপ্রদেশ। যাতায়াত ব্যবস্থার সমস্যার কারণেই রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবাও উন্নত নয়। তবে সেখানেও প্রত্যেকটা মানুষকে কোভিড প্রতিষেধক (Vaccine) পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে মালানা গ্রামের (Malana Village) ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়ার ছবি। আর সেখানে মানুষের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে ৩ ঘণ্টা ধরে পাহাড়ি রাস্তায় ট্রেক করে পৌঁছে গিয়েছেন ৫ জন চিকিৎসক।
সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও আগস্ট মাসের মধ্যেই হিমাচল প্রদেশের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে একটি প্রতিষেধক দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। সেপ্টেম্বরের গোড়াতেই শুরু হয়ে গিয়েছে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ পৌঁছে দেওয়ার কাজও। এর মধ্যেই ১৪ সেপ্টেম্বর জেলার স্বাস্থ্য অধিকর্তা অতুল গুপ্তর নেতৃত্বে একটি দল রওয়ানা হয় মালানা গ্রামের উদ্দেশে। কিন্তু পথে হঠাৎ ধস নামায় রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। গাড়িতে যাওয়ার উপায় নেই। পায়ে হাঁটার রাস্তাও বন্ধ। কিন্তু ভ্যাকসিনের ডোজ পৌঁছে দিতে যেন দেরি না হয়ে যায়, এই চিন্তাই ব্যস্ত রেখেছিল চিকিৎসকদের। শেষ পর্যন্ত তাঁরা ঠিক করলেন, পাহাড় ডিঙিয়েই পৌঁছে যাবেন গ্রামে। গাড়ি থেকে ভ্যাকসিনের বাক্স নামিয়ে প্রত্যেকে কাঁধে তুলে নিলেন। আর তারপর শুরু হল পাথরের খাঁজে পা রেখে রেখে এগিয়ে যাওয়া। মাঝখানে নদীও পেরোতে হয়েছে। তখন ভ্যাকসিনের বাক্সগুলি চাপিয়ে নিয়েছেন একটি গন্ডোলার মধ্যে।
ভারতের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলির একটি মালানা। এখানে মানুষের বিশ্বাস, তাঁরা আলেকজান্ডারের গ্রিক সেনাবাহিনীর বংশধর। ফলে অন্যান্য জনজাতির মানুষদের সঙ্গে মিশতে চান না। এর মধ্যেই ২০০১ সালে প্রথমবার ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়ার সময় বেশ কিছু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ফলে ভ্যাকসিন নিয়ে সবার মধ্যেই একটা আতঙ্ক ছিল। তাই চিকিৎসকদের কাজটাও সহজ ছিল না। তবে গ্রামের প্রধান রাজারাম এগিয়ে এসেছিলেন সাহস করে। আর তিনি ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেই গ্রামবাসীরা সাহস ফিরে পায়। প্রাচীন মন্দির চত্ত্বরে শুরু হয়ে যায় ইঞ্জেকশন দেওয়ার কাজ। প্রথম দিনের প্রায় ৫৫ জনকে প্রতিষেধক দেওয়া সম্ভব হয়। আর ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ জন গ্রামবাসী ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই পেয়ে গিয়েছেন।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সমস্ত মানুষকে ভ্যাকসিনের অন্তত একটি ডোজ দেওয়ার লক্ষমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। আর তার আগেই, নভেম্বরের মধ্যে হিমাচল প্রদেশের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দুটি করে ডোজই দিয়ে ফেলতে চান মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর। তবে চিকিৎসকদের এই আপ্রাণ লড়াই ছাড়া তা সম্ভব নয় কোনোভাবেই।
Powered by Froala Editor