প্রাচীন মিশরে উপাস্য দেবদেবীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সূর্যদেবতা ‘রা’। মিশর থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্যারিরাস ও নথি অনুযায়ী প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করতেন, সব মিলিয়ে ৬টি সূর্য মন্দির ছিল মিশরে। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত কেবলমাত্র ২টি সূর্য মন্দিরের অস্তিত্ব আবিষ্কার হয়েছিল মিশর (Egypt) থেকে। এবার আরও একটি সূর্য মন্দিরের (Sun Temple) সন্ধান মিলল কায়রোর ১২ মাইল দক্ষিণে আবু ঘুরাব (Abu Ghurab) থেকে। বিগত পাঁচ দশকের মধ্যে এটিই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার বলেই মনে করছেন গবেষকরা।
ন্যাপলস লরিয়েন্টাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়ারশ’-এর পোলিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সস ইনস্টিটিউটের গবেষকদের যৌথ অভিযানে সম্প্রতি প্রকাশ্যে এল এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে খ্রিস্টপূর্ব ২৫ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মিশর থেকে হারিয়ে যায় সংশ্লিষ্ট সূর্যমন্দিরটি। কিন্তু ফ্যারাও-নির্মিত সমসাময়িক বিভিন্ন স্থাপত্য আজও টিকে থাকলেও, কীভাবে হারিয়ে গেল প্রাচীন এই সূর্যমন্দির?
উঠে আসছে অবাক করা তথ্য। প্রাচীন এই সূর্যমন্দির ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল কোনো ফ্যারাও-এর আগ্রাসনেই। এমনটাই জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট অভিযানের প্রধান গবেষক ম্যাসিমিলিয়ানো নুজোলো।
১৮৯৮ সাল সেটা। মিশর থেকে আবিষ্কৃত হয়েছিল ফারাও নুসেরার তৈরি সূর্যমন্দির। পঞ্চম রাজবংশের ষষ্ঠ ফ্যারাও ছিলেন নুসেরা। ২৪০০-২৩৭০ খ্রিস্টপূর্বে তৈরি সেই মন্দিরই ছিল মিশর থেকে প্রাপ্ত প্রথম সূর্যমন্দির। নুসেরার তৈরি সেই সূর্যমন্দিরের তলা থেকেই গবেষকরা খুঁজে পেলেন সদ্য-আবিষ্কৃত মন্দিরটির ধ্বংসস্তূপ। অবশ্য নুসেরার তৈরি মন্দিরটি, কোনো পূর্ব-নির্মাণের ওপরে তৈরি তা অনুমান করা হয়েছিল বহু আগেই। সেই মন্দিরের তলা থেকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল মাটি ও কাদার তৈরি বিভিন্ন ইট এবং স্তম্ভ।
আরও পড়ুন
মিশরীয় সভ্যতারও ২০০০ বছর আগে মমি! কারা বানাতেন সেসব?
সম্প্রতি, প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সাইট থেকে খুঁজে পাওয়া যায় বেশ কিছু মাটির স্তম্ভ, মৃৎপাত্র, বিয়ারের বয়াম এবং ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের প্রধান কোষাধ্যক্ষের সমাধি। সময়ের হিসাব বলছে এইসব প্রত্নসামগ্রি ব্যবহৃত হত নুসেরার দুই প্রজন্ম আগে। সময়ের এই গড়মিল দেখেই শুরু হয়েছিল খননকার্য। সেখান থেকেই বেরিয়ে আসে আস্ত একটি সূর্যমন্দিরের অস্তিত্ব। তবে এই মন্দিরের বিশেষত্ব হল, মন্দিরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে প্রশস্ত প্রাঙ্গণ। রয়েছে বিশাল লম্বা একটি স্তম্ভও। সেখানেই সূর্য আরাধনা হত বলে মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
আরও পড়ুন
ইতিহাসে এই প্রথম অন্তঃসত্ত্বা মমি আবিষ্কার মিশরে
কিন্তু কে নির্মাণ করেছিলেন এই মন্দির? কেনই বা পাথরের বদলে মাটি দিয়ে নির্মিত হয়েছিল সেটি? না, এখনও পর্যন্ত সেই উত্তর খুঁজে পাননি গবেষকরা। মূলত, প্রাচীন মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিল ফ্যারাওরা সূর্যদেব ‘রা’-এর সন্তান। ফলে, মন্দিরের গায়ে খোদাই করে লেখা হত সংশ্লিষ্ট ফ্যারাও-এর নাম। সদ্য-আবিষ্কৃত মন্দিরটির ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত সেই ধরনের নিদর্শন খুঁজে পাননি গবেষকরা। তার জন্য আরও বিস্তারিত অনুসন্ধান প্রয়োজন বলেই মনে করছেন প্রধান গবেষক নুজোলো। তাঁর অনুমান, পাথরের মন্দির তৈরিতে সাধারণত বেশি সময় লাগত বলেই, দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করতে মাটির তৈরি এই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল কায়রোতে। এই মন্দির গঠন বা শিল্পকর্ম পছন্দ না হওয়ায় তা ধ্বংস করে ওই স্থানেই নতুন সূর্যমন্দির গড়ে তোলেন পরবর্তী ফ্যারাও। সবমিলিয়ে সাম্প্রতিক এই আবিষ্কারে শিহরিত প্রত্নতাত্ত্বিক মহল। এই আবিষ্কারের ওপর ভর করেই আরও অজানা তথ্য উঠে আসার সম্ভাবনাও মাথা চাড়া দিচ্ছে ইতিমধ্যেই…
আরও পড়ুন
মিশরের ‘সোনার শহর’-এর অলিগলিতে প্রত্নতাত্ত্বিকরা, উঠে আসছে অজানা তথ্য
Powered by Froala Editor