সাম্প্রতিক সময়ে গোটা বিশ্বজুড়েই তরজা চলছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে। কিন্তু সা সত্ত্বেও যেন চোখ খুলছে না মানব সভ্যতার। উত্তরোত্তর বাড়ছে দূষণ, অরণ্য নিধনের হার, কার্বন নির্গমনের মাত্রা। শুধু মানুষ নয়, তার ফলে একটু একটু করে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সমগ্র বাস্তুতন্ত্র। এবার এই মহাবিপর্যয় রুখতেই পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের ৪৪ শতাংশ অঞ্চল সংরক্ষিত (Conserved) করার প্রস্তাব দিলেন বিজ্ঞানীরা।
গতকাল খ্যাতনামা বিজ্ঞানপত্র ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্রটি। গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষকরা। প্রাথমিকভাবে বৈশ্বিক পরিসংখ্যান এবং বিশ্বজুড়ে নগরায়নের হারের ওপর ভিত্তি করে একটি মডেল প্রস্তুত করেন গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ডঃ জেমস অ্যালান। দেখান, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই মানুষের আবাসস্থল তৈরির জন্য ধ্বংস করা অবে ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১৩ লক্ষ বর্গ কিমি অঞ্চল। যা আয়তনে দক্ষিণ আফ্রিকার থেকেও বড়ো। মানব সভ্যতার এই অগ্রগতি গ্রাস করে নেবে অসংখ্য বন্যপ্রাণ এবং বিপন্নপ্রায় প্রজাতিকে।
পাশাপাশি তাঁদের তৈরি ডেটা মডেলিং এবং অ্যালগরিদমে উঠে আসছে পৃথিবীর ১৮৭ কোটি মানুষ, অর্থাৎ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ এমন অঞ্চলে বসবাস করেন যেখানে সংরক্ষণের বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ অঞ্চলই আফ্রিকা, মধ্য আমেরিকা এবং এশিয়ার উন্নত দেশগুলির অন্তর্ভুক্ত। এবং এই সমস্ত অঞ্চলেই কার্বন ফুটপ্রিন্টের পরিমাণ পাড়ছে দ্রুত গতিতে। এভাবেই চলতে থাকলে আগামীদিনে বিশ্ব উষ্ণায়নের মাত্রাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠবে মানব সভ্যতার কাছে।
তবে ভূমিসংরক্ষণের দাবি এই প্রথম নয়। গবেষকদের প্রস্তাবে ২০১৫ সালে সায় দিয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক একাধিক পরিবেশ সম্মেলন। ঠিক হয়েছিল ২০২০ সালের মধ্যেই সংরক্ষিত করা হবে বিশ্বের ১৭ শতাংশ অঞ্চল। তবে সেই লক্ষ্যভেদ ব্যর্থ হয়েছে সমস্ত ক্ষমতাশীল দেশের প্রশাসনই। চলতি বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকেও স্বাক্ষরিত হতে চলেছে এমনই এক ঐতিহাসিক বিশ্বচুক্তি। ৩০ শতাংশ অঞ্চল সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৭০টি দেশ। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় শেষ পর্যন্ত কি আদৌ বাস্তবায়িত হবে সেই প্রতিশ্রুতি?
আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, টাইগ্রিসের গর্ভ থেকে উঠে এল প্রাচীন নগরী
গবেষকদের মতে, সম্পূর্ণভাবে ৪৪ শতাংশ ভূপৃষ্ঠের সংরক্ষণ সম্ভব না হলেও, যত দ্রুত সম্ভব বদল আনতে হবে ভূমি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ নীতিতে। আইন করে বন্ধ করতে হবে বৃক্ষচ্ছেদন, সামুদ্রিক ও প্রাণীজ সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার। অন্তত তা হলেও অনেকটাই ঠেকানো যাবে বর্তমান পরিস্থিতিকে। এখন দেখার তাঁদের এই প্রস্তাবে বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রপ্রধানরা আদৌ মনোযোগ দেন কিনা…
আরও পড়ুন
ভারতে প্রতিবছর ৭ লক্ষ মৃত্যুর নেপথ্যে জলবায়ু, জানাচ্ছে সমীক্ষা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের জের, মুছে যাচ্ছে প্রাচীন গুহাচিত্র