বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ৪ হাজার বছরের প্রাচীন জনপদ, উদ্ধার ধ্বংসাবশেষ

ভারতবর্ষের ইতিহাস মানে শুধুই সিন্ধু সভ্যতা বা আর্য সভ্যতার ইতিহাস নয়। এই ভূখণ্ডের আনাচে-কানাচে বহু প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ গড়ে তুলেছিল নানা জনপদ। তাদের প্রত্যেকের সংস্কৃতি, প্রত্যেকের জীবনধারা আলাদা আলাদা। সম্প্রতি তেমনই এক সভ্যতার সন্ধান পাওয়া গেল ওড়িশার বালাসোরের কাছে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান, ভাগীরথীর মোহনা থেকে মহানদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এই সভ্যতার পরিধি। আর তার বয়স ৪ হাজার বছরের কম নয়।

ওড়িশার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি শাখা দীর্ঘদিন ধরে বালাসোর অঞ্চলে খননকার্য চালানোর চেষ্টা করে আসছিল। তাঁদের দৃঢ় ধারণা ছিল, এই অঞ্চলে মাটির নিচে পাওয়া যেতে পারে কোনো আশ্চর্য নিদর্শন। অবশেষে মাসখানেক আগে সেই নিদর্শনের সন্ধান পেলেন তাঁরা। বালাসোর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দূর্গাদেবী অঞ্চলে পাওয়া গেল প্রায় ৪ হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। প্রথমেই মাটি খুঁড়তে উঠে এসেছে অতি প্রাচীন এক দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। এরপর মাসখানেক ধরে দফায় দফায় উঠে এসেছে ইতিহাসের নানা পর্বের মানুষের অস্তিত্বের নানা সাক্ষ্য।

প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন, এই ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলিকে মোটামুটি তিনটি ঐতিহাসিক কালপর্বে ভাগ করা যায়। এগুলি মোটামুটি তাম্রযুগ, লৌহযুগ এবং প্রাচীন ঐতিহাসিক যুগের মধ্যে গড়ে উঠেছে। সময়কালের হিসাবে মোটামুটি ৪ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল এই সভ্যতা। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করছেন, ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে একই সময়পর্বে গড়ে ওঠা সভ্যতাগুলির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন এবং বিভিন্ন অঞ্চলের নগরায়নের ধারা বুঝতে সাহায্য করবে এই খননকার্য।

সমসাময়িককালে গাঙ্গেয় উপত্যকায় গড়ে ওঠা সংস্কৃতি সম্বন্ধে আমরা প্রত্যেকেই কমবেশি অবহিত। কিন্তু একই সময় মহানদীকে কেন্দ্র করেও গড়ে উঠেছিল এক বিরাট সভ্যতা। তার বিষয়ে হয়তো অনেকেই খবর রাখি না। অনার্য জনজাতির হাতে তৈরি এই সভ্যতার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় ছিল গাঙ্গেয় অঞ্চলের। কিন্তু এই যোগাযোগের মধ্যবর্তী সেতুটিই খুঁজে পাচ্ছিলেন না ঐতিহাসিকরা। সাম্প্রতিক এই আবিষ্কারে সেই সেতুটি খানিকটা পরিষ্কার হল বলেই মনে করছেন তাঁরা। বালাসোর অঞ্চল থেকে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে দুই মেদিনীপুরের উপকূল বরাবর এই সভ্যতা বিকশিত হয়েছিল বলেই মত প্রত্নতাত্ত্বিকদের।

আরও পড়ুন
যুদ্ধ, মহামারী, অভিবাসনে অশান্ত গোটা বিশ্ব; ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে মানব সভ্যতা?

তাম্রযুগের একটি বিরাট মাটির বাড়িরও সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। সেই বাড়ির গোলাকার মেঝে লাল রঙে রাঙানো। তাকে ঘিরে থাকা দেয়ালে লাল ও কালো রঙের নানা নকশা। এমনকি তামার বাসনপত্রের উপরেও লালা মাটির প্রলেপ দেওয়া রয়েছে। মূলত কৃষিকাজই ছিল মানুষের জীবিকা। তবে সভ্যতার শেষের দিকে লোহার ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে ভারী শিল্পের ব্যবহারও নজরে এসেছে। এখনও অবধি এই সভ্যতার রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। পরবর্তীকালে কোন পথে এগিয়েছিল ইতিহাস? অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গকে ঘিরে গড়ে ওঠা দীর্ঘ ইতিহাসের সঙ্গে কি এর কোনো যোগসূত্র রয়েছে? বাংলার পূর্বসূরি কি এই সভ্যতাই? এমনই নানা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে নানা স্তরে।

আরও পড়ুন
শিল্পকে হাতিয়ার করেই সভ্যতার সঙ্গে লড়াই ব্রাজিলের বিলুপ্তপ্রায় জনগোষ্ঠীর

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ান উপজাতিদের, প্রমাণ নয়া পরীক্ষায়

Latest News See More