ভারতের বুকেই ছিল নথি, চার দশকের সূর্য-ইতিহাস ‘আবিষ্কার’ বাঙালি বিজ্ঞানীদের

পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র সূর্য। আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে। অথচ তার ইতিহাসের খুব সামান্যই জানি আমরা। আর যা জানি, তাও বড়জোর বছর ৫০ আগের ইতিহাস। এই সময়ে মহাকাশ গবেষণার উন্নতির ফলে সূর্যের বুকে ঘটে চলা নানা ঘটনা অনেকটা কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। তবে আরও পুরনো ইতিহাসের তথ্য পড়ে ছিল এই ভারতের বুকেই। অবহেলায়, অযত্নে থাকা গবেষণাকেন্দ্র থেকেই আরও প্রাচীন ৪০ বছরের ইতিহাস খুঁজে বের করলেন তিন বাঙালি বিজ্ঞানী।

পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সৌরবীক্ষণকেন্দ্র কোদাইকানাল। উনিশ শতকের শেষ থেকেই এখানে পর্যবেক্ষণ শুরু হয়ে যায়। অথচ সেভাবে আর্থিক সহায়তা না পাওয়ায় ক্রমশ তার অবস্থা করুণ হয়ে ওঠে। কিন্তু এই অবস্থাই নতুন আবিষ্কারের জন্য সহায়ক হয়ে উঠল। কারণ সংস্কারের অভাবে প্রাচীন সমস্ত নথিই প্রায় অবিকৃত অবস্থায় ছিল। সেইসব নথি হাতড়ে সূর্যের ইতিহাস খুঁজে পেলেন বিদ্যাবিনয় কারক, দীপঙ্কর ব্যানার্জি এবং শুভময় চ্যাটার্জি।

সূর্যের ১৫ থেকে ১৯ তম সৌরচক্রের নথি খুঁজে পেলেন তিনি বাঙালি বিজ্ঞানী। অর্থাৎ আমাদের জানা সময়ের হিসাবে যা ছিল ১৯১৮ থেকে ১৯৫৯। যদিও বিদ্যাবিনয় কারক এবং তাঁর সহকারীদের হিসাব বলছে, এই সময় শুরু হয়েছিল ১৯১৭ সালের মাঝামাঝিতেই। এই ৪০ বছরে দুই মেরু থেকে চৌম্বক ক্ষেত্র একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটিয়েছে। পৃথিবীর দিকে ধেয়ে এসেছে একাধিক সৌরঝড়। সূর্যের বুকের থেকে গ্যাসীয় উপাদান ধেয়ে এসেছে গ্রহগুলির দিকে। আর এসবের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ পাওয়া গেল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’ পত্রিকার পাতায়।

এই বছরেই সূর্যের করোনা মানচিত্র তৈরির বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিদ্যাবিনয় কারক। আর এবারে সেই করোনার বুকে ঘটে চলা নানা ঘটনার ঐতিহাসিক কালচিত্র তৈরি করলেন তিনি। ভূগোল আর ইতিহাস, দুইয়ে মিলে সূর্যের মাস ইজেকশন বা সৌরঝড় সম্মন্ধে প্রায় সবই জানতে পারছেন বিজ্ঞানীরা। আর এর ফলে আগামীদিনে সৌরজগতের আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়াও অনেকটাই সহজ হবে বলে বিশ্বাসী গবেষকরা।

তথ্যসূত্রঃ LONG-TERM EVOLUTION OF THE SUN’S MAGNETIC FIELD DURING CYCLES 15–19 BASED ON THEIR PROXIES FROM KODAIKANAL SOLAR OBSERVATORY, Bidya Binay Karak, Dipankar Banerjee, Subhamoy Chatterjee

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সূর্য, পৃথিবী-সহ গোটা সৌরজগতটাই সরিয়ে অন্যত্র বসাতে চেয়েছিলেন এই বিজ্ঞানী!