আবিষ্কৃত চারটি নতুন কণা, বদলাবে পদার্থবিদ্যার তত্ত্বও

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা। সেখানেই রয়েছে পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী কণাত্বরক, লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার (এলএইচসি)। ২০০৯ সালে হিগস বোসন কণা আবিষ্কৃত হয়েছিল এই কোলাইডারের মাধ্যমেই। তাছাড়াও বিগ ব্যাং-এর পরবর্তী মুহূর্তের রহস্য অনুসন্ধানে এই যন্ত্রের বিকল্প নেই। এবার চারটি চার-চারটি নতুন কণার হদিশ পেলেন বিজ্ঞানীরা। নেপথ্যে এলএইচসি। গত ৩ মার্চ এই আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন গবেষকরা।

পদার্থবিদ্যার একেবারে শুরুতে মৌলিক কণা বলতে ধরে নেওয়া হত প্রোটন, নিউট্রন এবং ইলেকট্রনকে। কিন্তু পরবর্তীকালে ভেঙে গেছে সেই ধারণাও। আসলে প্রোটন কিংবা নিউট্রনও তৈরি হয় কোয়ার্ক নামক মৌলিক কণার সমাহারে। তারও রয়েছে ছয় ধরণের প্রকারভেদ। পাশাপাশি প্রতিটির রয়েছে একটি করে বিপরীত কণা বা অ্যান্টিকোয়ার্ক। আর তাদের বিশেষ সজ্জার মাধ্যমে শুধু প্রোটন, নিউট্রন নয়; তৈরি হতে পারে বহু বহু কণা। আর ঠিক এইভাবেই লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে ভারি কণাদের সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত মোট ৫৯টি কণা খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত কণাগুলি মূলত তৈরি চারটি অথবা পাঁচটি কোয়ার্ক নিয়ে। এর আগেও যে ট্রেট্রাকোয়ার্ক বা পেন্টাকোয়ার্ক কণা পাওয়া যায়নি, তা নয়। তবে সাম্প্রতিক এই আবিষ্কারের চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা দেখেছেন কোয়ার্কের সমাহারের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত হয় একটি বিশেষ শর্ত। কোনো একটি কণার মধ্যে কোয়ার্ক এবং অ্যান্টি-কোয়ার্কের সংখ্যার পার্থক্য থাকে শূন্য কিংবা তিন। অর্থাৎ, কোনো কণা তিনটি কোয়ার্কের মাধ্যমে তৈরি হতে পারে অথবা চারটি কোয়ার্ক এবং একটি অ্যান্টিকোয়ার্কের মাধ্যমে তৈরি হতে পারে। বা দুটি কোয়ার্ক এবং দুটি অ্যান্টি-কোয়ার্কের মাধ্যমে তৈরি হতে পারে।

তবে সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত চারটি কণার ক্ষেত্রেই এই শর্ত প্রযোজ্য নয়। প্রতিটির ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, প্রত্যেক মৌলিক কণাই কোয়ার্ক। সেখানে অ্যান্টিকোয়ার্কের অস্তিত্ব নেই কোনো। অর্থাৎ লঙ্ঘিত হয়েছে মৌলিক শর্তই। যা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত এবং আশ্চর্যজনক। এই ঘটনার কারণ ঠিক কী, এখনও তা পরিষ্কার নয় বিজ্ঞানীদের কাছে। তবে অ্যান্টিকোয়ার্ক ছাড়াও যে ভারি কণার জন্ম হতে পারে, তা স্পষ্ট করে দিল এই আবিষ্কার। সেইসঙ্গে এই আবিষ্কার এও জানিয়ে দিল, এখনও বহু অজানা পথ রয়েছে পদার্থবিদ্যার রহস্যে। এই আবিষ্কারের ওপর ভিত্তি করেই নতুন দিগন্ত খুলতে পারে মৌলিক পদার্থবিদ্যার, মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি বেশ কিছু বদলও আসতে চলেছে কোয়ান্টাম গতিতত্ত্ব এবং ইন্টার্যাদকশন তত্ত্বে। সব মিলিয়ে প্রচলিত পদার্থবিদ্যার ধারণাকেই এক কথায় নাড়িয়ে দিয়েছে এই চারটি নতুন কণা…

আরও পড়ুন
ধূমকেতুর মতো অদৃশ্য লেজ রয়েছে চাঁদেরও, রহস্যভেদ বিজ্ঞানীদের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মঙ্গলের বুকে নাসার রোভার, নিয়ন্ত্রণে ভারতীয় বিজ্ঞানীর তৈরি সফটওয়ার