মাত্র কিছুদিন আগের কথা, হইহই পড়ে গিয়েছিল বিজ্ঞানের জগতে। নাসার অত্যাধুনিক হাবল স্পেস টেলিস্কোপে যে তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়নি, তাই খুঁজে পেয়েছিল ভারতের অ্যাস্ট্রোস্যাট। ব্রহ্মাণ্ডে আলোর উৎস খুঁজে পেয়েছিলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। আর সেই গবেষণার নেপথ্যে ছিলেন একজন বাঙালি। তিনি বর্তমানে পুনের আইআইসিএএ-এর শিক্ষক ডঃ কনক সাহা। চলতি বছর দেশের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান সম্মাননা ভাটনাগর পুরস্কারের (Bhatnagar Award) মুকুট উঠল তাঁর মাথায়। কনকবাবুর সঙ্গেই এই তালিকায় রয়েছেন আরও ৩ জন বাঙালি। মোট ১১ জন পুরস্কার প্রাপকের মধ্যে ৪ জনই বাঙালি।
কোচবিহারের দিনহাটা স্কুলের প্রাক্তনী কনক সাহা পরবর্তীকালে পড়াশোনা করেছেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ এবং বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি থেকে। বর্তমানে পুনের সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদে রয়েছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বাধীন গবেষক দলটিই ৯৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের একটি নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মিকে চিহ্নিত করে। আর সেটাই ব্রহ্মাণ্ডে আলোর উৎস বলে মনে করা হচ্ছে। এই বিরল কৃতিত্বের জন্য এবছর মহাকাশ বিজ্ঞান বিভাগে একমাত্র তাঁকেই ভাটনাগর পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
একইভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি বিভাগেও একমাত্র পুরস্কারপ্রাপক একজন বাঙালি। তিনি খড়গপুর আইআইটি-র অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর দেবদীপ মুখোপাধ্যায়। এই আইআইটি থেকে পড়াশোনা করে এখানেই শিক্ষকতা করছেন দেবদীপবাবু। তাঁর কাজ মূলত ক্রিপ্টোগ্রাফি নিয়ে। ইন্টারনেটের জগতে তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে তাঁর গবেষণাই স্বীকৃতি পেল এবার। এছাড়াও তালিকায় রয়েছেন টাটা ইনস্টিটউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের গবেষক অনীশ ঘোষ। তিনি এবছর গণিতের দুজন পুরস্কারপ্রাপকের একজন। তাঁর গবেষণার বিষয় আর্গোডিক এবং নাম্বার থিওরি। রসায়ন বিজ্ঞানেও একবছর ২ জন পুরস্কারপ্রাপকের একজন বাঙালি। তিনি ডঃ কণিষ্ক বিশ্বাস। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনী আইআইএসসি-তে কিংবদন্তি অধ্যাপক সিএনআর রাও-এর আওতায় গবেষণা করেছেন একসময়। বর্তমানে তিনি জওহরলাল নেহেরু সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড সায়েন্টিফিক রিসার্চের শিক্ষক। সলিড স্টেট কেমিস্ট্রি এবং থার্মইলেক্ট্রিসিটি নিয়েই তাঁর গবেষণা।
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই ভাটনাগর পুরস্কারের তালিকায় বাঙালিদের জয়জয়কার। গতবছর ৭ জন বাঙালি পুরস্কার পেয়েছিলেন। ২০১৯ সালেও পেয়েছিলেন ৬ জন। এবারেও ৪ জন বাঙালি পেলেন দেশের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান পুরস্কার। তবে এর মধ্যে একটি আক্ষেপও থেকে গিয়েছে বাঙালির। এই রাজ্যের কোনো প্রতিষ্ঠান থেকেই সেভাবে পুরস্কার পাচ্ছেন না কোনো গবেষক। বাঙালির মেধা তাই সব জায়গায় স্বীকৃতি আদায় করে নিলেও গবেষণা পরিকাঠামোর দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে থাকছে বলে মনে করছেন অনেকে।
Powered by Froala Editor