কোভিড-১৯ এর মহামারী ঠেকাতে লকডাউনের ছাড়া আরো কোনো পদ্ধতিই এখনও অবধি আয়ত্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কিন্তু কাঁহাতক আর চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি থাকা যায়? অনেকের কাছেই অসহনীয় হয়ে উঠেছে এই বন্দিদশা। লকডাউনের শুরুর দিকে গোয়ার বাসিন্দা পঙ্কজ কুমারের পরিস্থিতিও ছিল এমনটাই। সারাদিন কাজের মধ্যে জড়িয়ে থাকা পঙ্কজবাবু গৃহবন্দি থাকার বদলে নিলেন নতুন কর্মসূচি। দরিদ্রদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া শুরু করলেন তিনি।
উত্তর গোয়ার আশাগাঁও অঞ্চলেই বাড়ি এই ভদ্রলোকের। প্রতিদিন সেখান থেকে নিজের গাড়ি করেই যাত্রা দিতেন দক্ষিণ গোয়ার ভাস্কোর উদ্দেশ্যে। তারপর বিকোলিম হয়ে ফিরতেন বাড়ি। গাড়িতে বোঝাই করা থাকত খাদ্যদ্রব্য। রাস্তায় অভুক্তদের বিতরণ করতেন সেইসব খাবার। এপ্রিলের গোটা দু’সপ্তাহ ধরে চলেছিল এই কর্মসূচি।
তবে এই কর্মযজ্ঞ তাঁর একার নয়। অংশীদার ছিলেন তাঁর কন্যা হিয়া নন্দিনীও। পিতা ও কন্যা যৌথভাবেই এই উদ্যোগ প্রথমে শুরু হয় সঞ্চয় ভাঙিয়েই। গোয়ায় আটকে থাকা কর্মহীন পরিযায়ী শ্রমিকদের অচলাবস্থা চঞ্চল করে তুলেছিল তাঁদের। ওই ব্যক্তি জানান, সরকারি সংস্থা এবং বেশ কিছু আঞ্চলিক মন্দির শ্রমিকদের থাকার বন্দোবস্ত করে দিলেও মূল সমস্যা হয়ে উঠেছিল খাবার। অনেকের কাছেই পৌঁছচ্ছিল না সরকারি সাহায্য। কেউ যাতে অনাহারে না থাকে, সেটাই মূল লক্ষ্য করে পথে নেমেছিলেন পঙ্কজ কুমার।
শুরুতে একশো জনের মতো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন খাবার। ক্রমশ বাড়তে বাড়তে সংখ্যাটা ৫০০-য় গিয়ে পৌঁছায়। তবে এই বিষয়ে জানতে পেরে অনেকেই অবিলম্বে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। উল্লেখযোগ্যভাবে আর্থিক সাহায্য পাঠান তাঁর বন্ধুও। সুষ্ঠভাবে এই কর্মসূচি সম্পন্ন করতে এগিয়ে এসেছিলেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরাও।
সম্প্রতি সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে এই সকল পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য। তাই কাজের ঠিকানাও বদলে গেছে পঙ্কজবাবুর। তাঁর গ্রাম আশাগাঁও এবং পার্শ্ববর্তী সালিগাঁওয়ের দুটি বৃদ্ধাশ্রমে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন তিনি। তাছাড়া গ্রামে অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাই একা থাকেন বাড়িতে। তাঁদের কাছেও পৌঁছে যাচ্ছে সাহায্য।
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই লড়াই সামনে থেকে লড়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুলিশকর্মীরা। তার সঙ্গেই পঙ্কজ কুমারের মতো অনেক মানুষ সংক্রমণের ভয় এড়িয়েই সামিল হচ্ছেন যুদ্ধে। বাইরে থেকেই লড়ে যাচ্ছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।