গুহাচিত্র বলতে অজন্তা-ইলোরাকেই বোঝেন অধিকাংশ মানুষ। তবে অজন্তারও বহু বছর আগে থেকে গুহাচিত্রের চল ছিল ভারতে। বিগত দু’দশকে তেলেঙ্গানায় (Telangana) আবিষ্কৃত হয়েছে এমনই অসংখ্য উদাহরণ। যার মধ্যে অন্যতম ওয়ারগাল আর্ট, দাসার্লাপল্লি, পাণ্ডবালু গুহালু, ওনটি গুনডু ইত্যাদি। এবার আরও দীর্ঘায়িত হল এই তালিকা। দক্ষিণের রাজ্যটিতেই হদিশ মিলল প্রাগৈতিহাসিক আরও একটি রক পেইন্টিং সাইটের।
ইয়াদাদ্রি ভুবনগিরি জেলার কাসিপেটার একটি গুহায় সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয় মেসোলিথিক যুগের আঁকা বেশ কিছু ছবি (Cave Paintings)। যেগুলির আনুমানিক বয়স ১০-৩০ হাজার বছর। গবেষণায় জড়িত ছিলেন ‘কোঠা তেলেঙ্গানা চারিথা ব্রুন্ডাম’-এর সদস্যরা। গুহাচিত্রগুলি যাচাই করা থেকে শুরু করে সেগুলির বিশ্লেষণ, আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত এবং প্রকাশ করার সমস্ত কাজই করেছে তেলেঙ্গানার সংস্থাটি।
তবে তেলেঙ্গানায় আবিষ্কৃত অন্যান্য গুহাচিত্রগুলির মতো বড়ো কোনো পার্বত্য গুহায় আঁকা হয়নি ছবিগুলি। কাসিপেটার ছোট্ট একটি টিলার অভ্যন্তরীণ কোটরের ছাদে আঁকা হয়েছিল সেগুলি। আঁকার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল লাল খড়িমাটি জাতীয় রং। সবমিলিয়ে গুহার ছাদে চারটি বাইসন, দুটি পুরুষের প্রতিকৃতি এবং একটি ঘোড়া-জাতীয় প্রাণীর ছবি চিহ্নিত করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। ছবিগুলি চিহ্নিতকরণ ও বিশ্লেষণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রাগৈতিহাসিক শিলাচিত্র বিশেষজ্ঞ বান্দি মুরলীধর রেড্ডি। সংশ্লিষ্ট গুহাচিত্রগুলি আঁকা হয়েছিল ইংরাজি হরফ ‘এক্স’-এর আকৃতিতে। অর্থাৎ মাঝে একটি মানব প্রতিকৃতি এবং তাকে ঘিরে চারটি বাইসনের চিত্র। এই একই নকশা মেনেই ছবি আঁকা হত রেগোন্ডা সাইটেও। অবশ্য দুটি পৃথক গুহাচিত্র সাইটের মধ্যে আদৌ কোনো যোগসূত্র ছিল কিনা, বিস্তারিত গবেষণা ছাড়া তা বলা অসম্ভব।
সংশ্লিষ্ট গুহাটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। কোনো দেবদেবীর মূর্তি না থাকলেও গুহাটিকে ভেঙ্কটেশ্বর মন্দির হিসাবে পুজো করেন স্থানীয়রা। সেই সূত্রেই গুহার অভ্যন্তরে চুনকামও করা হয়েছে একাধিকবার। গবেষকদের বিশ্বাস, চুনের প্রলেপে নষ্ট হয়ে গেছে গুহার দেওয়ালে থাকা আরও বেশ কিছু চিত্র। দুঃখের বিষয়, সেগুলি পুনরুদ্ধারের কোনো সম্ভাবনা নেই আর।
এখনও পর্যন্ত তেলেঙ্গানার বিভিন্ন জেলায় সবমিলিয়ে ৭০টি গুহাচিত্রের দেখা মিলত। সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭১-এ। আগামীদিনে এই গুহাচিত্র তেলেঙ্গানার এই জেলায় পর্যটন শিল্পেও প্রভাব ফেলবে বলেই অভিমত গবেষকদের…
Powered by Froala Editor