৩০ শতাংশ বৃক্ষ আচ্ছাদন জরুরি শহরে, বলছে গবেষণা

ফেব্রুয়ারি পড়তে না পড়তেই উধাও শীত। বদলে, ভারতের একাধিক রাজ্যেই গরমে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। ইতিমধ্যেই তাপপ্রবাহের (Heat Wave) ব্যাপারে সতর্কতাও দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু অঞ্চলে। কাজেই বলার অপেক্ষা থাকে না, আগামী কয়েকমাসে পরিস্থিতি আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে গোটা দেশজুড়ে। যার একমাত্র প্রতিকার গাছ। 

সম্প্রতি ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র জানাল এমনটাই। গবেষণার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট অফ গ্লোবাল হেলথের বিজ্ঞানীরা। সংশ্লিষ্ট গবেষণা জানাচ্ছে, মূলত শহরাঞ্চলে ৩০ শতাংশ বৃক্ষের আচ্ছাদন থাকলে তাপপ্রবাহ-জনিত মৃত্যুর ঘটনা এক-তৃতীয়াংশ কমিয়া আনা সম্ভব। কাজেই উত্তর গোলার্ধে পূর্ণমাত্রায় গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার আগেই শহরাঞ্চলে বৃক্ষরোপণের হার বৃদ্ধি করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। একইভাবে শহরাঞ্চলে বৃক্ষচ্ছেদন রুখতে বিশেষ আইন তৈরির প্রস্তাবও পেশ করেছেন গবেষকরা। 

৯৩টি ইউরোপীয় শহরের উপর এই গবেষণা চালিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর জুন থেকে আগস্ট মাসের তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন তাঁরা। আর সেই তথ্যভাণ্ডারই জানাচ্ছে, পার্শ্ববর্তী গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলে তাপমাত্রার গড় পার্থক্য থাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুধু উচ্চ তাপমাত্রাই নয়, জনঘনত্ব, কংক্রিটের কাঠামো, দূষণের কারণে বেশি পরিমাণ তাপ ধরে রাখে শহর। যার ফলে, সেখানে তাপপ্রবাহ-জনিত মৃত্যুর হারও স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি। হিটস্ট্রোক ছাড়াও শ্বাসজনিত মৃত্যুর কারণের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাপপ্রবাহের সম্পর্ক। সবমিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর ঘটনার ওপর এই সমীক্ষা চালিয়েছিলেন গবেষকরা। যার মধ্যে ৪ শতাংশ মৃত্যুর পিছনে দায়ী তাপপ্রবাহ। 

এই তথ্যভাণ্ডারের ওপর তৈরি সিম্যুলেশন জানাচ্ছে, শহরাঞ্চলে ৩০ শতাংশ গাছের উপস্থিতি থাকলে শহরের গড় তাপমাত্রা ০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনা সম্ভব। আর তাতেই কমবে তাপ-জনিত মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশ ঘটনা। ইউরোপ তো বটেই, ভারতের ক্ষেত্রেও এই গবেষণা প্রযোজ্য, তা বলার অপেক্ষা থাকে না। বিশেষত, ভারতের জনঘনত্ব ইউরোপের থেকে কয়েক গুণ বেশি হওয়ায়, শহরাঞ্চলে বৃক্ষরোপণ এবং বৃক্ষসংরক্ষণের বিশেষ প্রয়োজন আছে বৈকি। তা না-হলে এ-দেশে গ্রীষ্মকালে টিকে থাকাই দুষ্কর হয়ে উঠবে মানুষের পক্ষে…

Powered by Froala Editor