দীর্ঘ ৭০ বছর আগে ভারতের বুক থেকে সম্পূর্ণভাবে অবলুপ্ত হয়েছিল চিতা। সেই শূন্যস্থান ভরাট করতেই গতবছর নামিবিয়া থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল ৮টি চিতাকে। অবশ্য তা নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছিল বিভিন্ন মহলে। ভারতের পরিবেশ আদৌ নামিবিয়ার চিতাদের জন্য উপযুক্ত কিনা— প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। এবার ফের সেই প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হল সরকারকে। নেপথ্যে, ৩ দিনে ৩টি চিতাশাবকের (Cheetah Cubs) মৃত্যু।
সম্প্রতি কুনো জাতীয় উদ্যানে (Kuno National Park) চারটি শাবকের জন্ম দিয়েছিল জ্বলা নামের একটি নামিবিয়ান চিতা। সাত দশক পরে ভারতের বুকে চিতার জন্ম নিয়ে রীতিমতো আশাবাদীও ছিলেন গবেষক এবং বনদপ্তরের কর্মীরা। তবে গত ২৩ তারিখেই প্রয়াত হয় একটি শাবক। দু’দিন পর ২৫ তারিখ মৃত্যু হয় আরও দুটি শাবকের। শারীরিক অবস্থা ভালো নয় চতুর্থ শাবক এবং প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা চিতাটিরও।
গবেষকদের অনুমান, মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই মৃত্যু হয়েছে চিতা শাবকগুলির। বিগত কয়েকদিন ধরেই কুনো জাতীয় অরণ্যের তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গণ্ডি। কোথাও কোথাও উষ্ণতা পৌঁছেছে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। সঙ্গে চরম লু অর্থাৎ তাপপ্রবাহের শিকার হয় মধ্যপ্রদেশের এই জাতীয় অরণ্য। আর এই তাপপ্রবাহের কারণেই ডিহাইড্রেশনের শিকার হয় চিতা শাবকগুলি। ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে তাদের শারীরিক অবস্থা।
প্রথম শাবকটির মৃত্যুর পরেই তড়িঘড়ি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বনদপ্তরের কর্মীরা। মা-চিতা এবং তিনটি শাবককেই সরিয়ে আনা হয়েছিল পালপুর হাসপাতালেই। শাবকগুলিকে কৃত্রিমভাবে খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করা হয়। তা সত্ত্বেও প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়নি দুটি চিতা শাবকের। চতুর্থ শাবকটির শারীরিক অবস্থাও এখনও সংকটজনক। আর সেখান থেকেই প্রশ্ন উঠছে তবে কি কুনো চিতার বসবাসের জন্য উপযুক্ত জায়গা নয়?
সম্প্রতি রাজনৈতিক বিবাদ, বিতর্ক সরিয়ে রেখে নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টও। বন্যপ্রাণী অধিকার আইনানুসারে জানিয়েছে, ভারতের ‘আমদানিকৃত’ চিতাদের শারীরিকভাবে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে বনদপ্তরকে। প্রয়োজন হলে কুনো থেকে তাদের স্থানান্তরিত করতে হবে অন্যত্র।
আসলে শুধু চিতা শাবকই নয়, নামিবিয়া থেকে ভারতে নিয়ে আসা ৮টি চিতার মধ্যে দুটি প্রাপ্তবয়স্ক চিতারও মৃত্যু হয়েছে বিগত তিন মাসের মধ্যেই। ফলে ক্রমশ বাড়ছে উদ্বেগ। ফলস্বরূপ চিতাগুলিকে পরবর্তীতে রাজস্থানের গান্ধীসাগর অরণ্যে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন গবেষকদের একাংশ। যদিও এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে নিশ্চিতভাবে কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি সরকারি-স্তরে।
Powered by Froala Editor