সাহেবরা নাকি এককালে বলত, ‘What Bengal thinks today, India thinks tomorrow.’ তারপর নাকি বাঙালির অধঃপতনের যুগ শুরু হল। মেধা নেই, চর্চা নেই, সংস্কৃতি ভোগে যেতে বসেছে, ভাষাটাও হিন্দি খেয়ে নিল প্রায়, সাহিত্য ডুবু-ডুবু, খেলা-সিনেমা-- গর্ব করার মতো যেন কিছুই নেই। এ’কথা নিশ্চয়ই সত্যি। সবাই বলে যখন সত্যি না হয়ে যায় না। কিন্তু, চারপাশে তাও অঘটন ঘটে আজও। শঙ্খ ঘোষ দুম করে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়ে যান, ‘বাঙালি বিজ্ঞানী আর তৈরি হয় না’ শোনার পরেও (কিংবা আগেই) ছ-ছ’জন বাঙালি বিজ্ঞানী ভারতের বিজ্ঞানের জন্য প্রদত্ত শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার পান। তারপর আজ আবার প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থনীতিতে নোবেলও পেলেন। এই নিয়ে তিনজন বাঙালি অর্থনীতিবিদ নোবেল পেলেন। অর্থনীতি যদি সভ্যতার বুনিয়াদ হয়, তাহলে বাঙালি আজও পথ দেখাচ্ছে। দেশকে শুধু নয়, গোটা বিশ্বকে।
জহর কোট পরেই সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেখুন ভিডিও
১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তারপর, দীর্ঘদিন এই পুরস্কার অধরা ছিল বাঙালির। সেই খরা কাটে ১৯৯৮ সালে, অমর্ত্য সেন অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়ার পর। অমর্ত্য রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য। আবার, অমর্ত্য সেনের নোবেলপ্রাপ্তির ২১ বছর পর, আজ নোবেল পেলেন আরেক বাঙালি অর্থনীতিবিদ। উল্লেখ্য, তিনিও অমর্ত্য সেনের ছাত্র। সমাপতনের ইতিহাস যাকে বলে।
অমর্ত্য সেন আর অভিজিৎ বিনায়কের মাঝে অবশ্য আরেকজনও আছেন। তিনিও বাঙালি অর্থনীতিবিদ। যদিও ওপার বাংলার থুড়ি বাংলাদেশের। তিনিও নোবেল-বিজয়ী ২০০৬ সালে। নোবেল অবশ্য পেয়েছিলেন শান্তির জন্য। কিন্তু মহম্মদ ইউনূসের আসল পরিচিতি কিন্তু অর্থনীতিবিদ হিসেবেই। ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য তিনি ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ২০০৬ সালে যুগ্মভাবে পায় এই পুরস্কার।
তবে, বাঙালি অর্থনীতিবিদ আর নোবেলের মধ্যে প্রথম সেতু বেঁধেছিলেন অমর্ত্য সেনই। দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণদারিদ্র্যের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে গবেষণা এবং উদারনৈতিক রাজনীতিতে অবদান রাখার জন্য ১৯৯৮ সালে নোবেল পান অমর্ত্য সেন। আজ তাঁরই ছাত্র নোবেল পেলেন বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ নিয়ে যে পরীক্ষামূলক পদ্ধতি, তার দিশা দেখানোর জন্য।
কলকাতায় বালিগঞ্জের বাড়িতে থাকেন অভিজিৎবাবুর মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, অভিজিৎ শুধু তাঁর নয়, সারা বাংলার সকলের সন্তান তিনি। স্বভাবতই অভিজিৎবাবুকে নিয়ে গর্বে মেতেছে সব বাঙালিই। বর্তমানে যেখানে বাংলা ও বাঙালির মেধা নিয়ে বিভিন্ন স্তর থেকে প্রশ্ন উঠেছে বারবার, সেখানে এই নোবেলপ্রাপ্তি নিন্দুকদের মুখে কুলুপ আঁটার পক্ষে যথেষ্ট, তাতে সন্দেহ নেই। যদি অবশ্য নিন্দুকেরা নোবেল পুরস্কারকে মেধা ও স্বীকৃতির সম্মান হিসেবে গণ্য করেন, তবেই!