বিগত কয়েকদিন ধরে ঝুঁকি নিয়েই মহামারীর মধ্যে পোলিও-র ভ্যাকসিনেশান কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে আফগানিস্থানে। স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে এই গোটা প্রক্রিয়ায় এগিয়ে এসেছিল তরুণ প্রজন্মের নাগরিকরা। সামিল হয়েছিলেন মহিলারাও। কিন্তু তাঁদের তো থাকার কথা ঘরে বন্দি হয়ে, বোরখার আড়ালে। তাঁরা কীভাবে এমন একটা কাজে অংশ নিতে পারেন? আর সেই কারণেই তাঁদের ‘শাস্তি’ পেতে হল আফগান জঙ্গি সংগঠনগুলির হাতে। প্রাণ গেল তিন মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর।
অকুস্থল সেই জালালাবাদ শহর। আফগানিস্থানের এই শহরে গত সপ্তাহেই প্রাণ গিয়েছিল টিভি চ্যানেলে কর্মরত তিন মহিলাকর্মীর। আরও একবার রক্তক্ষরণ দেখল জালালাবাদ। মঙ্গলবার সরকারি তরফেই জানানো হয় এই ঘটনার কথা। দুটি পৃথক জায়গায় আলাদা আলাদাভাবে হয়েছে এই হত্যাকাণ্ড। তবে এখনও পর্যন্ত তালিবানরা এই হত্যার দায় স্বীকার করেনি।
গত রবিবার থেকেই আফগানিস্থান এবং পাকিস্তানে শুরু হয়েছিল পোলিও ভ্যাকসিনেশনের কর্মসূচি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তত্ত্বাবধানে এই কর্মসূচিতে টিকা দেওয়ার কথা ৯৬ লক্ষ শিশুকে। অংশ নিয়েছিলেন ৫৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী। দুটি প্রদেশকে সন্ত্রাসবাদের জন্য বাদ রাখা হলেও আফগানিস্থানের মোট ৩৪টি প্রদেশে শুরু হয় ভ্যাকসিনেশন পর্ব। তবে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টিকা দেওয়ার ফলাফল যে ভালো হবে না, তা আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিল তালিবানরা। দ্বিতীয় দিনেই তার প্রতিফলন দেখল আফগানিস্থান।
এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে টিকাকরণকে কেন্দ্র করে। তবে তারপরেও কেন সতর্ক হল না আফগান সরকার, প্রশ্ন উঠছে সেই নিয়েই। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের বিপদ জেনেও কেন ন্যূনতম সুরক্ষার বন্দোবস্ত করল না সরকার? আশ্চর্যের বিষয় হল, এই ঘটনা একার্থে ডেকে আনছে আফগানিস্থানেরই বিপদ। গত তিন বছর ধরে সেখানে বন্ধ পোলিও টিকাকরণ। চলতি বছরে যার দরুন পোলিওতে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় দু’ডজন আফগান শিশু।
আরও পড়ুন
‘অপরাধ’ টেলিভিশনে কাজ করা, জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা ৩ আফগান মহিলা
একইরকম অবস্থা প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানেও। ৪-৫ কোটি শিশুর ভ্যাকসিনেশনের জন্য কাজে নেমেছেন প্রায় তিন লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী। তবে তাঁদেরকেও বাড়ি বাড়ি যেতে দেওয়া হচ্ছে না টিকা দিতে। হত্যাকাণ্ড না হলেও তাঁদের ওপর চলছে নানা ধরণের সহিংস হামলা। সবথেকে বড়ো কথা কোনো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর পাশাপাশি এই অঘোষিত ‘যুদ্ধ’-এ নেমেছেন সাধারণ মানুষই।
পাকিস্তানেও গত দু’বছরে পোলিওতে আক্রান্ত হয়েছে তিন শতাধিক শিশু। কিন্তু তারপরেও কেন এই ধরণের আচরণ সাধারণ মানুষের? কারণ হিসাবে উঠে আসছে ধর্মীয় রক্ষণশীল মনভাব। পাশাপাশি রয়েছে বৈদেশিক প্রভাবও। ঠিক কেমন? ২০১১ সালে লাদেন হত্যার সময়, সিআইএ এজেন্টরা একটি ভুয়ো হেপাটাইটিস টিকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছিল পাকিস্তানে। পরবর্তীকালে সেই ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ পেতেই যেন ভ্যাকসিনে আরও বিমুখ হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়ায় হিংস্রতা ছড়িয়ে দিচ্ছে জঙ্গি সংগঠনগুলি। এর সমাধান খুঁজতেই বৈঠকে বসছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের কর্মকর্তারা…
আরও পড়ুন
স্কুলছাত্রীদের গান গাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা, আন্দোলনে পিছু হঠল আফগান সরকার
Powered by Froala Editor