এক ছাত্রীর আত্মহত্যায় চাঞ্চল্য ছড়াল আইআইটি দিল্লিতে। মঙ্গলবার ২৭ বছর বয়সী মঞ্জুলা দেবকের দেহ উদ্ধার করা হয় তাঁর হোস্টেলের ঘর থেকে। উচ্চশিক্ষার পর পিএইচডি’র গবেষণার কাজে নিযুক্ত ছিলেন আইআইটি দিল্লিতে। দীর্ঘদিন ধরেই শ্বশুরবাড়ির চাপে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন মঞ্জুলা। এমনটাই অভিযোগ জানান ওই ছাত্রীর অভিভাবক।
গত রবিবার মঞ্জুলা শেষ কথা বলেছিলেন বাড়ির সঙ্গে। সোমবার দুপুরের পর তাঁকে আর দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। বারবার দরজা নেড়েও সাড়া মেলেনি তাঁর। বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার হোস্টেলের অন্য ছাত্রছাত্রীরা পুলিশে খবর দেয়। সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ দিল্লি পুলিশ দরজা ভেঙে উদ্ধার করে ছাত্রীর মৃতদেহ।
মৃতদেহের সঙ্গে কোনো সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। বেশ কিছুদিন ধরেই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে হেনস্থা করা হচ্ছিল ওই ছাত্রীকে। তাঁর স্বামী মানসিক চাপ তৈরি করছিল পড়াশোনা ছেড়ে ব্যবসায় যোগ দেওয়ার জন্য। কুড়ি থেকে পঁচিশ লক্ষ টাকার পণের দাবি করেছিলেন মঞ্জুলার স্বামী। মঙ্গলবার ছাত্রীর পরিবার এ-কথা পুলিশকে জানায়।
পরিবারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তদন্ত করা শুরু করেছে পুলিশ। ২০১৩ সালে বিয়ে হয় মঞ্জুলার। তখন থেকেই কি মানসিক চাপের মুখেই পড়তে হয়েছিল তাঁকে? সেই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে পুলিশি তদন্তে। কারণ বছর পাঁচেক আগে ২০১৫ সালেও একবার হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। শেষ এক বছরেরও বেশি, মঞ্জুলা এবং তাঁর স্বামী আলাদাই থাকতেন।
তবে কোনো এফআইআর করা হয়নি থানায়। কারণ বিবাহের সাত বছরের মধ্যে কেউ আত্মহত্যা করলে সরাসরি এফআইআর করতে পারে না পুলিশ। অপেক্ষা করতে হয় সাব-ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের অনুসন্ধান পর্যন্ত। খুব শীঘ্রই মঞ্জুলার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের ডেকে পাঠাবেন ম্যাজিস্ট্রেট, এমনটাই আশ্বাস দেয় পুলিশ। তবে দিল্লি পুলিশ মঞ্জুলার ল্যাপটপ এবং ফোনের কলরেকর্ডের ভিত্তিতে অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছে ইতিমধ্যেই।
শোকের ছায়া নেমে এসেছে মঞ্জুলার বাড়িতেও। ভেঙে পড়েছেন তাঁর বাবা, মনোজ কুমার দেবক। নিজেকেই দোষারোপ করছেন তিনি। ভাবছেন আইআইটিতে পড়তে না পাঠিয়ে, ওই টাকা পণ হিসাবে দিলেই সমস্যার সমাধান হত। কিন্তু সত্যিই কি কোনো সমাধান হত তাতে? একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে, আজও মঞ্জুলার মতোই অনেকেই শিকার হচ্ছে পণের জন্য। সমাজের কাছে এর থেকে লজ্জার আর কিছুই হতে পারে না!