গত ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্র সবুজ সংকেত দিয়েছিল এক ঐতিহাসিক চুক্তিতে। আফগানিস্থানে শান্তি বজায় রাখতে মার্কিন সামরিক বাহিনী সরিয়ে নেওয়া হবে বলেই জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে পারতপক্ষে এর ফলাফল হতে চলেছে একদম উল্টোই। শান্তি তো দূরের কথা, বরং আবার সজাগ হয়ে উঠছে তালিবানরা। আর তার শিকার হচ্ছে আফগান শিশুরাই। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানাল আফগানিস্থানের একটি অলাভজনক সংস্থা।
‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ নামের এই সংস্থাটি সম্প্রতি দাবি করেছে প্রতিদিনই গড়ে পাঁচজন শিশু আফগানিস্থানে আহত অথবা নিহত হচ্ছে যুদ্ধের হিংস্রতায়। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্থানে শিশুমৃত্যু কি নতুন কথা? জাতিসংঘের প্রাপ্ত তথ্যেই দেখা যায়, ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্থানে মারা গেছে অথবা বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে কমপক্ষে ২৬ হাজার শিশু।
২০১৯ সালের পরিসংখ্যান বলছে, সেই প্রবণতা ধীরে ধীরে বাড়ছে ক্রমশ। গত বছরই শুধু প্রাণ হারিয়েছে ৮৮৪ জন। ভয়ঙ্কররকম আহত হয়ে প্রতিবন্দি হয়েছে আরও ২২৭৫ জন শিশু। সেভ দ্য চিলড্রেনের মতে এই মুহূর্তে শিশুদের জন্য পৃথিবীর ১১টি বিপজ্জনক দেশের মধ্যেই রয়েছে আফগানিস্থানের নাম। শিশু নিরাপত্তার কথা ভেবেই আন্তর্জাতিক শক্তিগুলির কাছে দ্বারস্থ হয়েছে আফগানিস্থানের এই সংস্থা। জেনেভা সম্মেলনে শিশুনিরাপত্তার দরুণ বিশেষ তহবিল তৈরিরও আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র সৈন্য প্রত্যাহার না করলেই কি মিটে যাবে সমস্যা? দেখা যাচ্ছে তালিবান ও আলকায়দা-সহ সরকার বিরোধী শক্তিগুলি বারবার আক্রমণের জায়গা হিসাবে বেছে নিয়েছে স্কুল প্রাঙ্গণকেই। হামলায় ব্যবহৃত হয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের পাশপাশি বিস্ফোরক পদার্থও। নিরাপত্তাপ্রদানের উদ্দেশ্যেই মার্কিন সেনাবাহিনী সেসব অঞ্চলে সংঘর্ষে জড়ালে অন্য ভাবে আক্রান্ত হয়েছে সেই শিশুরাই। তালিবান দমনে এয়ারস্ট্রাইকও প্রাণ কেড়েছে তাদের। রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৩০০টি বেশি আফগান স্কুল।
এ তো গেল শুধুমাত্র শিশুদের পরিসংখ্যান। বাদ নেই প্রাপ্তবয়স্করাও। সেক্ষেত্রেও মৃত্যুর তালিকায় নাম রয়েছে এক বছরে কমপক্ষে দশ হাজার জনের।
২০০১ সাল থেকেই আফগানিস্থানের পরিস্থিতি সামাল দিতে নিযুক্ত করা হয়েছিল মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনীকে। ২০১৪ সালে ব্রিটেন প্রত্যাহার করে নেয় সৈন্য। এবার সেই পথেই হাঁটল যুক্তরাষ্ট্রও। আগামী বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আরও ২০০০ সৈন্য সরিয়ে নেবে মার্কিন প্রশাসন। বাকি থাকবে মাত্র ২৫০০ সৈন্য। এই সুযোগ নিয়েই সহিংসতা বাড়াচ্ছে সরকার বিরোধীরা। ঝাঁঝ বাড়ছে আক্রমণের।
আরও পড়ুন
চাকরি করার ‘অপরাধে’ হারালেন চোখ, চলল গুলিও; আফগান মহিলার দুঃসহ দিনযাপন
এই আক্রমণ প্রতিহত করতে আফগানিস্থানের নিজস্ব সেনাবাহিনী কার্যত অপ্রতুল। ফলে ক্রমশ আতঙ্ক বাড়ছে সাধারণের মধ্যে। অনিশ্চয়তার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। আবার কি ফিরে আসবে অন্ধকার তালিবানি যুগ? সাহায্যের অপেক্ষায় হাজার হাজার আফগান নাগরিক...
Powered by Froala Editor