১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই, জায়গাটা বসনিয়া দেশের একেবারে পূর্ব প্রান্তে সারবার্নিকা শহর। এমনিতে সেখানে সার্ব জাতির মানুষদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকেন মুসলমানরাও। শহরের অর্থনীতি তেমন উন্নত নয়। তাই মানুষ বেঁচে থাকে পরস্পরের সহযোগিতার উপর নির্ভর করেই। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের বিদ্বেষ আর বিভাজনের আঁচ এসে পড়ল এই ছোট্ট শহরেও। মাত্র একদিনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারালেন অন্তত ৮ হাজার ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ।
ঘটনাটা পরিচিত সারবার্নিকা ম্যাসাকার নামে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বড়ো গণহত্যা ইউরোপের মাটিতে আর দ্বিতীয়বার ঘটেনি। আন্তর্জাতিক আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলেছে এই নিয়ে। গণহত্যার নায়ক চিফ জেনারেল রাটকো ম্ল্যাডিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে হেগ আদালত। ২০১৭ সালে আরেক রাজনৈতিক নেতা র্যা ভন কারাডজিয়াককেও জেলবন্দি থাকার নির্দেশ দিয়েছে হেগ। তবে এসবের পরেও মানুষের স্মৃতি থেকে এখনও মুছে যায়নি সেদিনের সেই দৃশ্য।
দেখতে দেখতে ২৫ বছর কেটে গেল, সেইসব মৃত মানুষদের স্মরণে আজও সারা দেশের ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ জমা হন স্মৃতি সৌধের সামনে। আসেন বহু যুদ্ধবিরোধী মানুষও। তবে এবার করোনা সংক্রমণের জন্য জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে সমস্ত মানুষ যাতে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেন, তাই জুলাই মাস জুড়ে চলবে প্রদর্শন। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে বসনিয়ান শিল্পী সাফেত জেকের আঁকা ছবি। আছে আইদা সেহোভিকের তৈরি ইনস্টলেশন। শনিবার থেকে সমাধিক্ষেত্রকে ঘিরে শুরু হয়েছে এই প্রদর্শনী।
তবে আজও বসনিয়ার বহু মানুষ এই ঘটনার জন্য লজ্জিত বোধ করেন না। এমনকি অনেকে একে গণহত্যা বলতেও রাজি নন। তাঁদের মতে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই প্রয়োজন ছিল এই হত্যালীলা। কিন্তু সেই দিনের স্মৃতি আজও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে বেড়ায় যাঁদের, তাঁরা শুধু প্রার্থনা করেন পৃথিবীর কোথাও যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে।
Powered by Froala Editor