বাসযোগ্য গ্রহ বলতে আমাদের বোধ যা বোঝে, তা হল পৃথিবী। এই নীলগ্রহ ছাড়া মহাবিশ্বে এমন গ্রহ যে রয়েছে তার হদিশই তো নেই আমাদের কাছে। সুতরাং পৃথিবী ঠিক কতোটা বসবাসযোগ্য তার হিসেব-নিকেশ করে দেখার চিন্তাভাবনা না আসাটাই স্বাভাবিক। তবে বিজ্ঞান তো আর এভাবেই থেমে থাকতে পারে না। সম্প্রতি ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা খুঁজে বার করলেন সৌরজগতের বাইরে ২৪টি নতুন গ্রহ। যারা শুধুই বাসযোগ্য নয়। বরং ‘সুপারহ্যাবিটেবল’। অর্থাৎ সেখানে পৃথিবীর থেকেও স্বচ্ছন্দে থাকতে পারবে মানুষ।
কিন্তু প্রশ্ন জাগার কথা, কেমন হবে চরিত্র হওয়া উচিত এই সুপারহ্যাবিটেবল গ্রহগুলির? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আয়তনে পৃথিবীর থেকে খানিকটা বড়ো, উষ্ণ এবং আর্দ্র হতে হবে সুপারহ্যাবিটেবল হতে গেলে।
সৌরজগতের বাইরের মোট ৪৫০০টি গ্রহের ওপরেই একটি সমীক্ষা চালিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। হাতিয়ার স্পেস টেলিস্কোপ। সেখান থেকেই বাছাই করে ২৪টি গ্রহ উঠে আসে বিজ্ঞানীদের হাতে, যা সুপারহ্যাবিটেবলের সংজ্ঞা মেনে চলছে। লক্ষণীয় প্রতিটি গ্রহের কক্ষপথের কেন্দ্রে থাকা নক্ষত্রের আয়তন সূর্যের থেকেও বড়ো। এবং সুপারহ্যাবিটেবল হওয়ায় তাদের মধ্যে অস্তিত্ব থাকতে পারে মানুষের থেকেও জটিল কোনো জীবের। ‘এলিয়েন লাইফ’-এর কথাও এভাবেই উসকে দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
গ্রহগুলির বয়স মূলত ৪-৫০০ কোটি বছর। পৃথিবীর বয়স যেখানে ৪৫০ কোটি বছর। তার বেশি পুরনো হলে গ্রহের ক্ষেত্রে কমতে থাকে ভূ-তাপ নিঃসরণ এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্রও। ফলে তা আর জীবের পক্ষে বসবাসযোগ্য থাকে না। জীবন নির্ধারণের সমস্ত শর্ত উপস্থিত থাকলেও মহাজাগতিক রশ্মির থেকে প্রতিরক্ষাও কবজ না থাকায় সমস্যা তৈরি হয়।
তবে এই গ্রহগুলিতে উপনিবেশ স্থাপনের কথা ভাবতে ভালো লাগলেও, তা বেশ অসম্ভবই। কারণ প্রতিটি গ্রহই রয়েছে কমপক্ষে ১০০ আলোকবর্ষ দূরে। বা তারও বেশি। ফলে দ্বিতীয় পৃথিবী খুঁজে পাওয়ার আশা না করাই ভালো। তবে গ্রহগুলির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই পরবর্তীকালে ভিনগ্রহের প্রাণীদের যে সন্ধান মিললেও মিলতে পারে, সে কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। চলছে উন্নততর সেই প্রজাতিরই সন্ধান। কেই বা বলতে পারে, হয়তো এক জীবনেই ১০০ আলোকবর্ষ দূরত্ব অতিক্রম করার পন্থা রয়েছে তাদের কাছে!
Powered by Froala Editor