সাম্প্রতিক সময়ে আমাজন তো বটেই, ক্যালিফোর্নিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া-সহ বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশেই কমবেশি লেগে রয়েছে দাবানলের প্রকোপ। বনভূমি ধ্বংসের পাশাপাশি মানুষের কার্যকলাপে ক্রমাগত বদলাচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। বদলাচ্ছে জলবায়ু। এসবের মধ্যে এবার সামনে এল আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। পরিবেশের নিরাপত্তা তো প্রশ্নের মুখেই, সেইসঙ্গে যাঁরা প্রকৃতিরক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের পরিণতিও হচ্ছে ভয়ঙ্কর। পরিবেশ ও মানবাধিকার সংস্থা গ্লোবাল উইটনেসের সাম্প্রতিক রিপোর্ট জানাচ্ছে তেমনটাই। সব মিলিয়ে ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে হত্যার শিকার হয়েছেন ২২৭ জন পরিবেশকর্মী।
২০১৮ সালে সংখ্যাটা ছিল ১৬৮। গত বছরের রিপোর্টে তা এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২০৭। এবার প্রায় আরও ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেল পরিবেশরক্ষকদের ওপর নৃশংসতার পরিমাণ। প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৪ জনের বেশি পরিবেশকর্মীর মৃত্যুকে আশঙ্কাজনক হিসাবেই দেখছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
গ্লোবাল উইটনেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ৭০ শতাংশ ঘটনার শিকার হয়েছেন বনভূমি-রক্ষকরা। বৃক্ষচ্ছেদন, অবৈধ খনন, চোরাশিকার, পাচার, ঝুম চাষের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়েই প্রাণ দিতে হয়েছে অধিকাংশ পরিবেশকর্মীকে। বাকি ৩০ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন নদী দূষণ, বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের প্রতিবাদীদের ওপর। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন প্রাচীন জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। তাঁদের সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ হলেও, ৩০ শতাংশ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন মাটির ভূমিপুত্ররাই। এই ঘটনা যেন আরও বেশি করে প্রমাণ দিচ্ছে, বৃক্ষচ্ছেদন ও অরণ্যের ওপর অত্যাচার পরিবেশের পাশাপাশি বিপন্ন করে তুলছে বাস্তুতন্ত্র এবং প্রকৃতি-ঘেঁষা মানুষগুলোকে।
আর অপরাধীরা? তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের প্রশাসন? উত্তর শুনলে ঘাবড়ে যাবে যে কেউ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সব দুর্নীতি এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জুড়ে রয়েছে সরকারই। হ্যাঁ, অবাক লাগলেও সত্যি। সরকারি মদতেই চলছে বেআইনি খাদান থেকে শুরু করে পাচার। কোথাও কোথাও আবার এসব হত্যার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বহুজাতিক সংস্থারাও।
আরও পড়ুন
অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়া হোক তারের বেড়া, গাছের দুর্দশায় প্রতিবাদ পরিবেশকর্মীদের
পরিসংখ্যানের নিরিখে দেখলে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম অঞ্চল ল্যাটিন আমেরিকা। সর্বোচ্চ ৬৫ জন পরিবেশকর্মী নিহত হয়েছেন কলোম্বিয়ায়। তাছাড়াও প্রথম পাঁচের মধ্যেই রয়েছে মেক্সিকো, ব্রাজিল এবং হন্ডুরাস। শেষের দিকে থাকলেও এই তালিকা থেকে বাদ যায়নি ভারত। গত বছর ভারতেও ঘটেছে এই ধরনের ৪টি ঘটনা।
আরও পড়ুন
ফেলে দেওয়া মাস্ক থেকেই জন্মাবে গাছ, আবিষ্কার ভারতীয় পরিবেশকর্মীর
সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক গবেষণায় বার বার উঠে আসছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পরিবেশ ধ্বংস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ধীরে ধীরে আমরা এগিয়ে চলেছি ষষ্ঠ গণঅবলুপ্তির দিকে। আলোচনা হচ্ছে সংরক্ষণ নিয়েও। অথচ বাস্তবে তার বিন্দুমাত্রও প্রতিফলন নেই, তা স্পষ্ট এই রিপোর্টে। দ্রুত সচেতনতা না ফিরলে, যার মাশুল গুনতে হবে কড়ায়গণ্ডায়।
আরও পড়ুন
পরিবেশ বাঁচাতে সমুদ্রের তলদেশে বাগান-নির্মাণ, নেপথ্যে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা
Powered by Froala Editor