যে-কোনো কাজ, বৃত্তি, বাণিজ্য অর্থাৎ জীবিকা নির্বাহের স্বাধীনতা রয়েছে প্রত্যেক নাগরিকের। এমনটাই বলে ভারতীয় সংবিধানের ১৯ নং অণুচ্ছেদ। তবে বাস্তবে কর্ম বা বৃত্তি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে মহিলাদের মধ্যে একাধিক প্রাচীর গড়ে দিয়েছে সমাজ। অবশ্য ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে সেই পরিস্থিতি। সমাজের প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি ভেঙে অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছেন মহিলারা। সম্প্রতি এই লড়াই-এর ময়দানে নজির গড়লেন কোচির ২১ বছর বয়সি অ্যান মেরি অ্যানসালেন (Ann Mary Ansalen)।
অ্যান এর্নাকুলাম ল কলেজের আইনের ছাত্রী। তবে প্রতি রবিবার তাঁকে দেখা যায় এক ভিন্ন ভূমিকায়। বাসের চালকের আসনে। হ্যাঁ, সমাজের স্টিরিওটাইপ ভেঙে তিনি বেছে নিয়েছেন বাসচালকের (Bus Driver) ভূমিকা। কাক্কানাদ-পেরুম্বাদাপ্পু রোডে প্রতি রবিবার সারাদিন বাস চালান অ্যান।
না, জীবিকার জন্য তাঁর এই পদক্ষেপ নয়। ছোটোবেলায় স্কুলবাসে করে স্কুলে যাওয়ার সময় থেকেই তাঁর স্বপ্ন একদিন বাস চালাবেন তিনি। শুধু বাসই নয়, মোটরবাইক থেকে শুরু করে চার চাকার গাড়ি— সবকিছুর প্রতিই তাঁর প্রবল আকর্ষণ ছিল ছোটো থেকেই। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই প্রথম বাবার রয়্যাল এনফিল্ডে বাইকচালনা শেখেন অ্যান। ১৮-র গণ্ডি পেরনোর আগেই শিখেছিলেন গাড়ি চালানোও। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর পরই লাইসেন্সও জোগাড় করে ফেলেন তিনি। তবে বাস চালানোর স্বপ্ন অধরাই থেকে যায় তাঁর। এবার এই স্বপ্নপূরণ করতেই রাস্তায় নেমেছেন তিনি।
অ্যান প্রকাশ্যেই স্বীকার করেন, এই স্বপ্নপূরণের জন্য তিনি ঋণী তাঁর প্রতিবেশী শরৎ এম এস-এর কাছে। আদতে তিনি পেশায় একজন বাসচালক। কাক্কানাদ-পেরুম্বাদাপ্পু রোডে বর্তমানে যে বাস চালান অ্যান, তার আসল তিনি শরৎবাবুই। তাঁর কাছেই প্রথম বাস চালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন অ্যান। এমনকি অ্যানের বায়নার জেরেই প্রতি রবিবার অ্যানকে চালানোর অনুমতি দেন তিনি। অবশ্য অ্যান এই কাজের জন্য এক টাকায় পারিশ্রমিক নেন না। সবটাই তিনি তুলে দেন শরৎবাবুর হাতেই।
আরও পড়ুন
ক্যানসার নিয়েও পরিবেশরক্ষার লড়াই, গোল্ডম্যান পুরস্কার মেক্সিকান তরুণীর
৮ মাস আগের কথা। প্রথমবারের জন্য অ্যানকে দেখা গিয়েছিল বাসচালকের আসনে। এই ঘটনায় রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছিলেন নিত্যযাত্রীরাও। এমনকি দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় অনেকেই তাঁর বাসে উঠতে চাননি সেসময়। তাঁর প্রতি অন্য বাসচালকদের আচরণও ছিল বেশ হতাশাজনক। বাসস্ট্যান্ডে যেমন ঠাট্টা-তামাশা চলত তাঁকে নিয়ে, তেমনই রাস্তায় তাঁকে ইচ্ছে করে ওভার-টেক করতেন অন্যান্য বাসচালকরা। তবে বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে বদলে গেছে সেই পরিস্থিতি। বা বলা ভালো, অ্যানই প্রমাণ করে দিয়েছেন লিঙ্গের ওপর নির্ভর করে না কোনো কাজের দক্ষতা। শুধু বাসচালকরাই নন, কোচির স্থানীয় মানুষরাও মেনে নিয়েছেন এই কথা। কজনই বা পারে, অ্যানের মতো এভাবে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল আনার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে?
আরও পড়ুন
প্রথম এশীয় মহিলা হিসেবে মলোকাই চ্যানেল জয় কালনার তরুণীর
Powered by Froala Editor