পৃথিবীজুড়ে মহামারীর চেহারা নিয়ে নিয়েছে কোভিড-১৯। সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে একমাত্র ভরসা নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্ধ করে রাখা, সমস্তরকম সামাজিক মেলামেশা থেকে দূরে থাকা। দেশজুড়ে চলছে ২১ দিনের লকডাউন। কিন্তু ২১ দিন পরেও কি স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি? এই প্রশ্নই ঘুরছে সবার মাথায়।
আরও পড়ুন
সেরে উঠেও রেহাই নেই চিনে, ১৪% মানুষ দ্বিতীয়বার আক্রান্ত করোনায়
উত্তর দিতে পারে একমাত্র বিজ্ঞান। ২১ দিন পর পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াবে? অন্যান্য দেশে সংক্রমণের পরিসংখ্যান এবং তার সঙ্গে এদেশের বাস্তবতাকে মিলিয়ে একটা তুলনামূলক ধারণা পাওয়া যেতে পারে। আর সেই চেষ্টাই করেছেন কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির অ্যাপ্লায়েড ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সের দুই বিজ্ঞানী। দুজনেই ভারতীয়, একজন আবার বাঙালি। গবেষণার কাজটি মূলত করেছেন রণজয় অধিকারী। সহযোগিতা করেছেন রাজেশ সিং। বিভিন্ন বয়সের ভারতীয়দের স্যোসাল কনট্যাক্ট স্ট্রাকচার এবং তিন প্রজন্মের পরিবার ব্যবস্থার মডেল নিয়ে একটা ভবিষ্যদ্বাণী করার চেষ্টা করেছেন।
আরও পড়ুন
হাসপাতালে স্থানাভাব, মেঝেতে শুয়ে করোনা-আক্রান্তরা – ভয়াবহ দৃশ্য স্পেনে
কী বলছেন তাঁরা? ২১ দিন পর কি জনজীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসবে? পরিসংখ্যান তত্ত্বের হিসাব বলছে, ততদিনে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ১০০-র নিচে নেমে আসবে ঠিকই, ফলে জনজীবন আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতেই পারে। কিন্তু তাহলেই আবার ঘটবে বিপত্তি। তখন আবার দ্রুতহারে বাড়বে সংক্রমণ। ফলে মে মাসের মাঝামাঝি সংখ্যাটা অনায়াসে ৫০০০-এর ওপর পৌঁছে যাবে।
আরও পড়ুন
৯০ বছর আগেই খোঁজ মিলেছিল করোনার, প্রথম আক্রমণ ১৯৬৫ সালে
তাহলে উপায়? সেই উত্তরও দিয়েছেন অধ্যাপক অধিকারী। হিসাব কষে দেখাচ্ছেন, একটানা ৪৯ দিন যদি লক-ডাউন থাকে, তাহলে সমস্ত আশঙ্কা মোটামুটি মিটবে। কিন্তু এই সপ্তাহ খানেকের ধাক্কাতেই অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। নাভিশ্বাস উঠেছে গৃহবন্দি মানুষেরও। এর মধ্যে আরও ৪৯ দিন? যদি সম্ভব না হয় তাহলে কিছুদিন বিরতি নিয়ে করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগবে। যেমন একটা মডেল দিয়েছেন অধ্যাপক অধিকারী। প্রথমে ২১ দিন লকডাউন। তারপর ৫ দিনের বিরতি নিয়ে আরও ২৮ দিনের লকডাউন। আবার ৫ দিনের বিরতি নিয়ে ১৮ দিনের লকডাউন। ব্যাস। ততদিনে করোনা ভাইরাসের দাপট বাগে আনা যাবে। প্রয়োজন অনুযায়ী এই নির্ঘণ্ট সামান্য অদলবদল করে নেওয়া যায়। তবে ২১ দিনের লকডাউনে আসলে তেমন কিছুই হওয়ার নয়। এমনটাই মনে করছেন গবেষণাপত্রের লেখকরা।
আরও পড়ুন
খাবারের জন্য লম্বা লাইন, কেউ বাড়ি ফিরছেন পায়ে হেঁটেই; ‘অসহায়’ দিল্লির ছবি
ভারতে করোনা ভাইরাসের প্রভাব নিয়ে সম্ভবত এই প্রথম কোনো গবেষণা হল, যাতে জনজীবনের চরিত্র বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। আর জটিল জীবনযাত্রার কারণেই এদেশে ভাইরাসের মোকাবিলাও খানিকটা জটিল। তবে ওষুধ আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত যে লকডাউনই একমাত্র উপায়, সেকথা মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এখন এই ভবিষ্যতবাণী বাস্তবে কতদূর মেলে এবং সেই অনুযায়ী সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই।