শুধু সুভাষচন্দ্রই নন, ১২৫ বছরে পা দিলেন এঁরাও

/৫

আজ ২৩ জানুয়ারি। বাংলা তো বটেই, সারা দেশের কাছে এ এক স্মৃতিরোমন্থনের দিন। ১৮৯৭ সালের আজকের দিনেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ পর্বে তিনি ছিলেন সবদিক থেকেই এক ব্যতিক্রমী অধিনায়ক। দেশবাসী তাঁকে মনে রাখবে, এটাই স্বাভাবিক। আর এ-বছর তিনি পা দিলেন ১২৫ বছরে। স্বাভাবিকভাবেই উদযাপনের উষ্ণতা আরও খানিকটা বেশি। কিন্তু এই চলতি বছরেই ১২৫ বছরে পা দিচ্ছেন আরও বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা বাঙালি। যাঁদের অনেককেই হয়তো আমরা সেভাবে মনে রাখিনি। দেখে নেওয়া যাক তেমনই কিছু মানুষের পরিচয়।

/৫

দিলীপকুমার রায় (২২ জানুয়ারি ১৮৯৭ – ৬ জানুয়ারি ১৯৮০) নেতাজির ঠিক আগের দিন জন্মেছিলেন অমর গীতিকার নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র দিলীপকুমার রায়। বাবার পথ অনুসরণ করেই তিনি পা রেখেছিলেন সঙ্গীতের জগতে। পাশাপাশি লিখেছেন নাটক, প্রবন্ধ। তবে বাবার গান তাঁকে কোনোদিনই আকৃষ্ট করত না। তিনি চাইতেন হিন্দুস্থানি ঘরানার সমকক্ষ বাংলা গান লিখতে, সুর তৈরি করতে। ক্রমশ তার মধ্যে ছাপ পড়েছে ব্রিটিশ, জার্মান এবং সুইৎস সঙ্গীতের। ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ গান হয়ে উঠেছিল বিপ্লবীদের মন্ত্র। ঋষি অরবিন্দের একনিষ্ঠ শিষ্য দিলীপকুমার রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকেও প্রশংসা পেয়েছেন।

/৫

প্রফুল্লচন্দ্র সেন (১০ এপ্রিল, ১৮৯৭ – ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯০) নামটা বললে আর নতুন করে পরিচয় দেওয়ার বিশেষ দরকার পড়ে না। ইনি পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী। বিধানচন্দ্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বাংলার রূপায়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। অবশ্য রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ঘটে ব্রিটিশ শাসনের সময়েই। ছাত্ররাজনীতি দিয়ে শুরু এবং পড়ে ১৯৩০-৪২ সালের মধ্যে বহুবার জেলে যেতে হয়েছে তাঁকে। স্বাধীন ভারতে শ্রীরামপুর অঞ্চলে জাতীয় কংগ্রেসের সাংগঠনিক কাজ শুরু করেন। দলের প্রতি নিবেদিত প্রাণ এই মানুষটি অবশ্য শেষ জীবনে দলীয় কোন্দলে অংশ না নেওয়ায় কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এই বছরেই ১২৫ বছরে পা দিয়েছেন তিনিও।

/৫

নিতীন বসু (২৬ এপ্রিল, ১৮৯৭ – ১৪ এপ্রিল ১৯৮৬) ইউরোপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারতের বুকেও সিনেমা তৈরির স্পর্ধা দেখিয়েছিলেন হাতে গোনা যে কয়েকজন মানুষ, তাঁদেরই একজন নিতীন বসু। নিউ থিয়েটার আন্দোলনের অন্যতম শরিক নিতীন বসু খুব তাড়াতাড়ি মঞ্চ ছেড়ে জায়গা নিলেন ক্যামেরার পিছনে। ১৯৩০ সালে তৈরি হল প্রথম সিনেমা ‘বুকের বোঝা’। কলকাতা এবং মুম্বাইয়ের ইন্ডাস্ট্রিতে একের পর এক কাজ করে গিয়েছেন তিনি। শেষদিকের অধিকাংশ কাজই করেছেন বোম্বে টকিজ এবং ফিল্মিস্তানের ব্যানারে।

/৫

নীরোদ সি. চৌধুরী (২৩ নভেম্বর ১৮৯৭ – ১ আগস্ট ১৯৯৯) আন্তর্জাতিক বাঙালিদের কথা বললে তাঁর নাম আসতে বাধ্য। আসলে তিনি যেন বাঙালি নন। ভুল করে এক সাহেব জন্ম নিয়েছেন বাংলার বুকে বাঙাল পরিবারে। অন্তত জীবনের দীর্ঘ সময় লন্ডন প্রবাসে থেকে এবং ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যচর্চা করে তিনি যে সম্মান পেয়েছেন, তাতে এমনটা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। যদিও নিজের দেশের প্রতিও তাঁর ভালোবাসা কোনো অংশে কম ছিল না। ব্রিটিশদের সংস্কৃতি এবং রুচিবোধের প্রশংসা করতেন, আর ঠিক সেই কারণেই দেশের পাট চোকাতে হল। ১৯৫১ সালে প্রকাশিত ‘দ্য অটোবায়োগ্রাফি অফ অ্যান আননোন ইন্ডিয়ান’ প্রথম খ্যাতি এনে দেয়। এরপর মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত সচল ছিল তাঁর কলম। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ডিলিট সম্মানের পাশাপাশি ডাফ কুপার মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড, আনন্দ পুরস্কার এবং দেশিকোত্তম পুরস্কারও।

Powered by Froala Editor

More From Author See More