পূর্ব মিশরের (Egypt) লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত প্রাচীন বন্দর বেরেনিস। মিশরের অর্থনীতি এবং বাণিজ্য অনেকাংশেই নির্ভরশীল এই বিশেষ বন্দরটির উপর। এশিয়া এবং আরবের সঙ্গে জলপথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই বন্দর। তবে শুধু বর্তমান সময়ে নয়, আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে থেকেই মিশরের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল বেরেনিস। এবার এই অঞ্চল থেকেই আবিষ্কৃত হল এক আশ্চর্য প্রত্নসামগ্রী। একটি পূর্ণাঙ্গ বুদ্ধমূর্তি (Buddha Statue)।
মিশরে বুদ্ধমূর্তি প্রাপ্তির কথা শুনলে চমকে ওঠাই স্বাভাবিক। তাও যদি তার বয়স হয় ২০০০ বছর। হ্যাঁ, বেরেনিস থেকে উদ্ধার হওয়া এই মূর্তির বয়স কমপক্ষে ২০০০ বছর। বছর কয়েক আগে, বেরেনিসের সমুদ্র বন্দর সংলগ্ন এলাকায় ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন মিশরীয় মন্দিরগুলিতে অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন পোলিশ-মার্কিন প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল। তেমনই একটি প্রাচীন মন্দির খননের সময়ই উদ্ধার হয় রোমান যুগে নির্মিত বুদ্ধমূর্তিটি।
২৮ ইঞ্চি অর্থাৎ প্রায় আড়াই ফুট দীর্ঘ বুদ্ধমূর্তিটি প্রস্তর নির্মিত। দণ্ডায়মান অবস্থায় গৌতম বুদ্ধের সম্পূর্ণ চেহারাকে একটি প্রস্তরখণ্ডে খোদাই করেই তৈরি করা হয়েছে এই মূর্তিটি। তাঁর পায়ের তলায় পদ্মফুল, মাথার পিছনে আলোকপ্রভা। তৎকালীন সময়ে নির্মিত এহেন বহু বুদ্ধমূর্তির সন্ধান মেলে ভারত এবং পূর্ব এশিয়াতে। তবে মিশরের বুকে বুদ্ধমূর্তি প্রাপ্তি— এই প্রথম।
মিশর সংলগ্ন অঞ্চলেই জন্ম হয়েছিল ইহুদি, ইসলাম এবং খ্রিস্টান— এই তিনটি আব্রাহামিক ধর্মের। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, যে-সময় এইসকল ধর্মের উৎপত্তি, তখনও প্রাচীন মিশরীয়রা মূলত পুজো করত বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানকে। তাঁদের কাছে তখনও ঈশ্বর বলতে সূর্যদেবতা রা, আকাশ ও বায়ুর দেবী আমুন কিংবা চন্দ্রদেবতা কনশু। আনুমানিক ৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অস্তিত্ব টিকে ছিল প্রাচীন মিশরীয় ধর্মের। তারপর সে-দেশে ধীরে ধীরে প্রসার লাভ করে খ্রিস্টধর্ম এবং ইসলাম। অথচ, তারও আগে সেখানে বুদ্ধমূর্তি পৌঁছাল কীভাবে?
না, ইসলাম বা খ্রিস্টধর্মের আগে বুদ্ধধর্মকে আপন করে নিয়েছিলেন মিশরীয়রা— এমন ভাবার কারণ নেই কোনো। তেমনটা হলে, মিশরজুড়ে খুঁজে পাওয়া যেত গৌতম বুদ্ধের স্থায়ী মন্দির, বৌদ্ধমঠ। গবেষকদের অভিমত, এই মূর্তি আসলে ভারতের সঙ্গে মিশরের প্রাচীন বাণিজ্যিক সম্পর্ককেই চিহ্নিত করে। ভারত এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া থেকে সে-সময় বহু বণিকই সমুদ্রপথে পাড়ি দিতেন মিশরে। মিশর হয়ে ইউরোপেও পৌঁছাতেন তাঁরা। ভারত মহাসাগর ও লোহিত সাগর-গামী এই জলপথ সে-সময় পরিচিত ছিল ‘মেরিটাইম সিল্ক রুট’ বা ‘সামুদ্রিক রেশমপথ’ নামে। এই পথেই ভারতীয় বা দক্ষিণ এশীয় বণিকদের মাধ্যমেই মিশরে পৌঁছেছিল বুদ্ধমূর্তিটি। সম্ভবত সেটিকে উপহার হিসাবেই দান করা হয়েছিল মন্দিরে। অবশ্য এই মূর্তি নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করছেন গবেষকরা। একইসঙ্গে বেরেনিস বন্দরে অনুসন্ধানও জারি রাখছেন তাঁরা। এই অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত প্রত্নসামগ্রী প্রাচীন মিশরের সঙ্গে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্কের ব্যাপারে নতুন করে আলোকপাত করতে পারে বলেই বিশ্বাস প্রত্নতাত্ত্বিকদের…
Powered by Froala Editor