বিগত কয়েক দশক দেখা মেলেনি তাদের। বিজ্ঞানীরা ধরেই নিয়েছিলেন পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়ে গেছে সেসব জীব। আর এখানেই দেখা দিল চমক। বলিভিয়ার আন্দিজ পর্বতমালায় এমনই হারিয়ে যাওয়া ২০টি প্রজাতিকে আবার আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু বিরল প্রাণী এবং উদ্ভিদের প্রজাতিও।
বলিভিয়ার রাজধানী লা পাজের কাছেই অবস্থিত, জঙ্গো ভ্যালি অঞ্চলের পার্বত্য উপত্যকায় ২০১৭ সালে একটি পরীক্ষামূলক অভিযান চালিয়েছিলেন বেসরকারি সংস্থা ‘কনসার্ভেশন ইন্টারন্যাশনাল’-এর বিজ্ঞানীরা। গবেষক ট্রন্ড লারসেনের নেতৃত্বে ১৪ দিনের সেই অভিযানে তুলে আনা বিভিন্ন প্রাণীর চিত্র ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের নতুন করে বিশ্লেষণ করেন তাঁরা। আর তাতেই নতুন করে আবিষ্কৃত হয় হারিয়ে যাওয়া প্রজাতিগুলি।
পর্বত এবং ঘন চিরসবুজ অরণ্য মোড়া আন্দিজের এই অঞ্চলটি জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ চিরকালই। অরণ্যের বাইরের অংশে পর্যটকদের প্রবেশাধিকার মিললেও, গহীন অরণ্যে প্রবেশ নিষেধ সকলেরই। আর সেখানেই অগোচরে ছিল এইসব অজানা প্রজাতিরা।
‘পার্বত্য ফের-দে-ল্যান্স ভাইপার’, ‘বলিভিয়ান ফ্ল্যাগ স্নেক’, ‘ডেভিল আইড ফ্রগ’, ‘দ্য স্যাটায়ার বাটাইফ্লাই’, ‘লিলিপুটিয়ান ফ্রগ’ প্রভৃতি প্রাণীর পাশাপাশি বেশ কিছু অর্কিড এবং প্রজাপতির প্রজাতিও আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীর অন্যতম বিষাক্ত সাপের প্রজাতির মধ্যেই ধরা হত ‘ফের-দে লেন্স ভাইপার’-কে। প্রায় ৯৮ বছর আগে এই প্রজাতি পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে বলে ধরা হয়েছিল। তবে এই আবিষ্কারের পরে অনুসন্ধান চালিয়ে আন্দিজের আরও বেশ কিছু জায়গায় খুঁজে পাওয়া গেছে এই সাপের অস্তিত্ব। অন্যদিকে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম উভচর লিলিপুটিয়ান ব্যাঙকেও খুঁজে পাওয়া গেল একমাত্র এই আন্দিজেই। মাত্র ১ সেমি দৈর্ঘ্যের এই ব্যাঙের মধ্যে রয়েছে কেমোফ্ল্যাজ তৈরির অদ্ভুত এক ক্ষমতা।
তবে আশ্চর্যের ব্যাপার, বিজ্ঞানের পরিধিতে না ধরা পড়লেও এই প্রজাতিগুলির মধ্যে অনেকগুলির অস্তিত্বের ব্যাপারেই ওয়াকিবহাল স্থানীয় উপজাতিরা। তাঁদের থেকেই সন্ধান মেলে নতুন এক প্রজাতির বাঁশের। যাকে শেষ দেখা গিয়েছিল ২০ বছর আগে। জঙ্গলের ভেতরে দিব্যি বজায় রয়েছে তাদের অস্তিত্ব। বিশেষ করে এই বাঁশ দিয়ে বাঁশি এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেন উপজাতির মানুষেরা।
আরও পড়ুন
দক্ষিণ আমেরিকায় ধেয়ে আসছে বিরাটাকার হিমশৈল, বিপন্ন পেঙ্গুইন ও সীলের প্রজাতি
একসঙ্গে ২০টি নতুন প্রজাতিকে খুঁজে পেয়ে উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানীমহল। তবে পর্যটক নিষিদ্ধ হলেও আশঙ্কা কাটছে না। বছর কুড়ি আগে সরকারি প্রকল্পে একটি ড্যাম তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল অরণ্যের একটি বড়ো অংশ। তাতেই হারিয়ে গিয়েছিল বেশ কিছু প্রজাতি। পাশাপাশি চোরাশিকার এখনও প্রাণীদের নিরাপত্তাকে বড়ো একটা প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করাচ্ছে। বিষধর সাপের অস্তিত্বের কথা প্রকাশ্যে আসায় বিষ সংগ্রহের জন্য আরও বাড়তে পারে চোরাশিকারিদের উপদ্রব, তৈরি হচ্ছে সেই সম্ভাবনাও...
Powered by Froala Editor