দুর্ঘটনা ঘটেছিল তিনদিন আগে। সাধারণ কোনো দুর্ঘটনা নয়। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেলের সঞ্চয় ধীরে ধীরে মিশতে শুরু করেছিল নদীর জলে। উত্তর মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত দুটি নদীর রং পাল্টে গেল রাতারাতি। অথচ দুদিন ধরে সেই তামাটে লাল রং নজরে পড়ল না কর্তৃপক্ষের। বিদ্যুৎকেন্দ্রের তরফ থেকেও কোনো খবর জানানো হল না স্থানীয় প্রশাসনকে। প্রাথমিকভাবে তাঁদের দাবি, তাঁরা পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এই চেষ্টা করতে করতে আশেপাশের পরিবেশ যে গভীর সংকটের মধ্যে উপস্থিত হচ্ছিল, সেদিকে লক্ষ ছিল না তাঁদের। ঘটনার কথা শুনে তাই স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজিত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের এই বিপর্যয়কে জাতীয় সংকট বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
‘জাতীয় সংকট’, অর্থাৎ রাশিয়া সরকার সমস্ত শক্তি দিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চেষ্টা করবে। অবশ্য প্রাথমিক অবস্থাতেই ব্যবস্থা নেওয়া গেলে এত বিপদ ঘটত না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্টোরেজ ট্যাংকে কোনোভাবে ভাঙন ধরে এবং তারপর সেখান থেকে লাগে আগুন। এমন ঘটনা তো অনেক জায়গাতেই ঘটে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে মালিকপক্ষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার মাশুল দিতে হচ্ছে প্রকৃতিকে। দুইদিন পর দেখা যায় অকুস্থল থেকে ১২ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে পরিত্যক্ত খনিজ তেল। এর ফলে নদীর এবং তার উপত্যকার বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, সেকথা বলাই বাহুল্য। অবশ্য সাইবেরিয়ার নরলিস্ক শহর এমনিতেই দূষণের জন্য কুখ্যাত। স্থানীয় নিকেল কারখানার জন্য অনেক আগেই সবুজ বনভূমি নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এত বড় বিপর্যয় আগে কখনও ঘটেনি।
দুর্ঘটনার পর প্রশাসনকে কোনো সংবাদ দেওয়া না হলেও, সামাজিক মাধ্যমে নদীর অবস্থার বিবরণ দেখতে পান স্থানীয় গভর্নর। ছবিটা প্রেসিডেন্ট পুতিনেরও নজরে আসে। আর তারপরেই প্রত্যেকে নড়েচড়ে বসেন। বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থার ডিরেক্টরকেকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এখনও অবধি কোন কোন ধারায় মামলা শুরু হবে, তা ঠিক হয়নি। সূত্রের খবর, বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি এবং পরিবেশ বিধি অগ্রাহ্য করার অভিযোগ আনা হবে তাঁর বিরুদ্ধে। অন্যদিকে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের উপরেও ক্ষোভ উগরে দেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। গভর্নরকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, সরকারি আধিকারিকরা কেন যথেষ্ট সচেতনতার সঙ্গে কাজ করছেন না? এবার কি তাহলে সামাজিক মাধ্যমের সাহায্যেই প্রশাসন চালাতে হবে?
তবে এইসব চাপানউতোরের মধ্যেও আসল প্রশ্ন হল, যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা মোকাবিলার পথ কী? ইতিমধ্যে ২০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি তেল মিশেছে নদীর জলে। ১৯৮৯ সালের এক্সন ভালদেজ দুর্ঘটনার পর এমন ঘটনা আর ঘটেনি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে সরকার কিভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে, সেটাই এখন দেখার।
আরও পড়ুন
পরিবেশকে শুশ্রূষা দিল লকডাউন, আবার ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেব না তো আমরা?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
সুন্দরবনকে পরিবেশ দিবসের ‘উপহার’, ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ রোপণের সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর