সামনেই আন্তর্জাতিক জি-৭ সম্মেলন। এই সময়ে সারা পৃথিবীজুড়ে উঠে আসছে পরিবেশ সুরক্ষার কথা। আর ঠিক তখনই ভারতের বুকেও শুরু হয়েছে নতুন এক পরিবেশ আন্দোলন। ফেসবুক, টুইটার সহ সমস্ত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে ‘সেভ বক্সাহা ফরেস্ট’ বা ‘ইন্ডিয়া স্ট্যান্ডস উইথ বক্সাহা’ হ্যাশট্যাগ। কারণ মধ্যপ্রদেশের এই অরণ্য অঞ্চলেই হীরার উত্তোলনের ছাড়পত্র পেয়েছে আদিত্য বিড়লা গ্রুপের এসেল মাইনিং অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সরকারের ছাড়পত্র পেলেও এই প্রকল্প মেনে নিতে রাজি নন স্থানীয় বাসিন্দারা। চুক্তিপত্র অনুযায়ী খনি অঞ্চলে ২ লক্ষের বেশি গাছ কাটা পড়তে চলেছে। স্বাভাবিকভাবেই এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে সোচ্চার হয়েছেন পরিবেশকর্মীরাও।
গতবছরই জঙ্গল জরিপ করে খনির মানচিত্র তৈরি করতে গিয়েছিলেন এসেল লিমিটেডের ইঞ্জিনিয়াররা। কিন্তু স্থানীয় অরণ্যবাসী মানুষদের বিরোধিতার মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত ফিরে যেতে হয়েছিল তাঁদের। এবার আরও বেশি প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করতে চলেছে কোম্পানি। তাই বিক্ষোভ কর্মসূচির পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ পরিবেশকর্মীরা। বিচারপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সমস্ত প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশের আবেদনও জানানো হয়েছে। যদিও রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের বক্তব্য, সবরকম আইনি ব্যবস্থা নিয়েই এই প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে সরকারের এই কথা মানতে রাজি নন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মোট ৩৬৪ হেক্টর খনি থেকে ৩ কোটি ৪২ লক্ষ ক্যারেট হীরা উত্তোলন করা যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে ২০০৬ সালে একটি অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানিও একই পরিসংখ্যান দিয়েছিল। এর ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারত যথেষ্ট লাভের মুখ দেখবে বলেই আশা করা যায়। কিন্তু এই বিরাট ওপেন-ক্রাস্ট খনির পিছনে যে প্রাকৃতিক বিনিয়োগ প্রয়োজন, তাও নেহাৎ কম নয়। বিশেষ করে ক্ষতির মুখে পড়বেন অরণ্যবাসী মানুষ। ২ লক্ষ গাছের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ জলেরও অপচয় হবে। সরকারিভাবে জানানো হয়েছে, প্রতিদিন ৫.৯ মিলিয়ন কিউবিক সেন্টিমিটার জলের প্রয়োজন। অন্যদিকে পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের দাবি, মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ড এলাকা ইতিমধ্যে যথেষ্ট শুষ্ক। সেখানে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ ১৭ মিলিয়ন কিউবিক সেন্টিমিটারের বেশি নয়। ফলে এই খনি কাজ শুরু করলে আশেপাশের এলাকায় চাষের জল, এমনকি পানীয় জলেরও যথেষ্ট সংকট দেখা দেবে। এই সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে দেশের সর্বোচ্চ আদালত উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলেই মনে করছেন সকলে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দুই সহস্রাধিক গাছের অভিভাবক তিনি, বার্ধক্যও দমাতে পারেনি পুরুলিয়ার দুখু মাঝি-কে