তলায় চাকা লাগানো ছোট্ট একটা বর্গাকার একটা বাক্স। আর তাকে ঘিরে মানুষের আকারের প্রমাণ সাইজের একটি কাচের চোঙ। ঠিক যেন টেস্ট টিউব। অভিনব এই যানবাহনেই ছেয়ে গেছে রাস্তা। তাতে চেপেই যাতায়াত করছেন অসংখ্য মানুষ। ১৯৬২ সালে ইতালির এক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল এমনই একটি ছবি। ২০২২ সালে পৃথিবীর পথঘাটের চরিত্র ঠিক কীরকম হবে— এ ছবি তারই একটি পূর্বাভাস মাত্র।
প্রায় ছ’ দশক আগের আঁকা এই ছবিই এখন মহামারীর আবহে পুনরায় ভাইরাল ইন্টারনেটে, সোশ্যাল মিডিয়ায়। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে মারণ ভাইরাসের থেকে বাঁচবার জন্য বার বার উঠে আসছে মাস্কের ব্যবহার আর দূরত্ববিধির কথা। সেখানে দাঁড়িয়ে এহেন যান সত্যিই সমাধান হয়ে দাঁড়াতে পারে সংক্রমণ আটকানোর— তাতে সন্দেহ নেই কোনো। নেটিজেনরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন সেই জায়গাটাতেই। প্রশ্ন থেকে যায়, তার মানে কি এই ছবির শিল্পী সত্যিই জানতেন, একুশ শতকে ভয়াবহ এক মহামারীর ছায়া ঢেকে ফেলবে গোটা পৃথিবীকে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে ফিরে যেতে হবে ছবিটির ইতিহাসে।
১৯৬২ সালের ১২ ডিসেম্বর ইতালির সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘লা ডোমেনিকা ডেল করিয়ের’ বা ‘সানডে কুরিয়ার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল এই কার্টুন। শিল্পী ওয়াল্টার মোলিনো। ছবিটির সঙ্গেই প্রকাশিত হয়েছিল স্বল্প দৈর্ঘ্যের একটি বিবৃতিও। মোলিনোর আঁকা কার্টুনটি নতুন করে ‘ভাইরাল’ হলেও, এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সেই লেখাটিকে।
মোলিনোর এই ছবি আঁকার মূল উদ্দেশ্য ছিল, ট্রাফিক সমস্যার সমাধান খুঁজে বার করা। বড়ো বড়ো আয়তনের লাক্সারি কার, ট্যাক্সি প্রয়োজনের থেকে বেশি জায়গা দখল করে রাখে রাস্তায়। শুধুমাত্র একজন বা দু’জন যাত্রীর জন্য এতবড়ো গাড়ির ব্যবহারই যে যানজটের কারণ— সে কথাতেই জোর দিয়েছিলেন মোলিনো। আর তার সমাধান হিসাবে ন্যূনতম ক্ষেত্রফলের মাত্র একজন যাত্রীবাহী ছোট্ট একটি গাড়ির প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। যে যানের কথা বলা হয়েছে শুরুতেই। মোলিনো তার নাম দিয়েছিলেন সিঙ্গোলেটা। যা মূলত দু’চাকার যানবাহনেরও আরও সংক্ষিপ্ত বিকল্প।
আরও পড়ুন
বিশ্বের প্রথম শিল্পী রোবট, ঝুলিতে আত্মপ্রতিকৃতিও!
মোলিনোর এই ছবি ২০২২ সালে মানুষের জীবনযাত্রার ভবিষ্যদ্বাণী নয়। বরং, তা কাল্পনিক পরিবহন ব্যবস্থার এক আভাস মাত্র। তবে মহামারীর আবহে আজকের বাস্তবের সঙ্গে এই ছবির প্রেক্ষাপট যে অনেকটাই সমাপতিত, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। মহামারীর দেড় বছর পেরিয়ে আসার পরেও আজও প্রকোপ কমেনি তার। প্রতিদিনই গোটা বিশ্বে আক্রান্ত হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। সেইসঙ্গে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুমিছিল। এর পরিণতি ঠিক কী— তা জানা নেই কারোরই। তবে কি মোলিনোর এই কাল্পনিক প্রযুক্তিই মানব সভ্যতার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার হাতিয়ার হয়ে উঠবে কিছুদিনের মধ্যে? জানা নেই উত্তর। তবে একথা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে শিল্পীরা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হন…
আরও পড়ুন
১৮ হাজার ডলারে ‘অদৃশ্য’ স্থাপত্য বিক্রি ইতালির শিল্পীর!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে একজোট এশিয়-আমেরিকান শিল্পীরা, চলছে সচেতনতামূলক প্রচার