সাধারণত কোনো প্রতিকূল জায়গায় যাওয়ার উপযুক্ত নয় আল্ট্রা-লাইট বিমান। তবে তাতে চড়েই সারা পৃথিবী পরিক্রমণের রেকর্ড তৈরি করেছেন বেলজিয়ামের জারা রাদারফোর্ড (Zara Rutherford)। বয়স মাত্র ১৯ বছর। বিমানে সঙ্গী বলতেও ছিলেন না কেউই। সম্পূর্ণ একা গোটা পৃথিবী ঘুরেছেন বিমান নিয়ে। তিনিই কনিষ্ঠতম মহিলা যিনি একা বিমান চালিয়ে পৃথিবী ঘুরেছেন। তবে এটুকু বললেই হয়তো কিছুই বলা হয় না। কারণ এই রেকর্ডে তাঁর ঠিক পিছনে রয়েছেন আমেরিকার মহিলা পাইলট শায়েস্তা ওয়াইজ। তিনি পৃথিবী পরিভ্রমণ করেছিলেন ৩০ বছর বয়সে।
গত বছরই ইংল্যান্ডের ১৮ বছরের পাইলট ট্র্যাভিস ল্যাডলো বিমানে সারা পৃথিবী ঘুরেছেন। লিঙ্গ নির্বিশেষে তিনিই কনিষ্ঠতম রেকর্ডজয়ী। তবে ট্র্যাভিস বা শায়েস্তা কেউই আল্ট্রা-লাইট বিমানে এত বড়ো যাত্রার ঝুঁকি নেননি। রাদারফোর্ডের এই যাত্রা তাই আলাদা উল্লেখের দাবি রাখে। বেলজিয়ান-ব্রিটিশ দম্পতির প্রথম সন্তান জারা, বাবা-মা দুজনেই পাইলট। তাঁদের দেখেই এই পেশায় আসার ইচ্ছা ছিল জারার। অবশ্য মহিলা হয়ে বিমান চালনার মতো পেশা বেছে নেওয়ায় অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। শুধু বাবা-মা পাশে ছিলেন। এই সময়েই ট্র্যাভিসের রেকর্ডজয়ের খবর জানতে পেরেই নিজেও বিমান নিয়ে বেরিয়ে পড়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন জারা। এবারেও বাবা-মায়ের কাছ থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা এবং প্রশ্রয় পেয়েছিলেন তিনি।
গত আগস্ট মাসে বেলজিয়ামের কোর্টরিজ বিমান বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেন জারা। প্রথমে ঠিক ছিল ৩ মাসে ৪৫টি দেশ ঘুরবেন তিনি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যাত্রাপথের পরিবর্তন ঘটাতে হয়। সময়ও কিছুটা বেশি লাগে। অবশেষে ৪১টি দেশ ঘুরে ২০ জানুয়ারি আবার কোর্টরিজ বন্দরে ফিরে এসেছেন জারা। এর মধ্যে ১৫৫ দিন কাটিয়েছেন আকাশে। বেলজিয়ামে ফিরে সেই অভিজ্ঞতার গল্প শুনিয়েছেন তিনি। একবার সিঙ্গাপুরে তাঁর বিমানের ঠিক পাশ দিয়ে বিদ্যুৎ ছুটে যায়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। আবার ক্যালিফোর্নিয়ার উপর দিয়ে যখন যাচ্ছিলেন, তিনি জানতেন না তখন গোটা দেশে দাবানল জ্বলছে। হঠাৎই দাবানলের ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায় চারদিক। তার মধ্যে নানা প্রতিকূল আবহাওয়া তো ছিলই। আলাস্কা এবং বুলগেরিয়ায় ঝড়ের মুখে পড়তে হয়েছিল। আবার সাইবেরিয়ার ঠান্ডায় বিমানের জ্বালানিই জমে যেতে বসেছিল।
তবে এসবের মধ্যেই সুখকর অভিজ্ঞতার ঝুলি নেহাৎ শূন্য নয়। সাইবেরিয়ার বরফে ঢাকা প্রান্তর হয়তো আর কোনোদিন চোখে দেখার সুযোগ হবে না, এটাই জারার সবচেয়ে বড়ো আক্ষেপ। তেমনই স্মৃতিতে থেকে যাবে সৌদি আরবের মরু প্রান্তরের দৃশ্যও। জারা চান, তাঁর এই অভিজ্ঞতার কথা আরও অনেক মানুষ জানুক। বিশেষ করে মহিলারা। সারা পৃথিবীতে এখন মাত্র ৫.১ শতাংশ পাইলট মহিলা। এই দৃশ্যটাই বদলে দিতে চান জারা। তাঁর এই রেকর্ডজয় যদি অন্যান্য মহিলাদের পাইলটের পেশা গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করে, তাহলেই তাঁর উদ্দেশ্য সফল হবে। এমনটাই জানিয়েছেন জারা রাদারফোর্ড।
আরও পড়ুন
চাকরি ছেড়ে শিশু ও মহিলাদের জন্য লড়ছেন সাংবাদিকা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ছেড়েছেন চাকরি, শিশু ও মহিলাদের ত্রাতা প্রাক্তন সাংবাদিকা