১৮৮ বছর ধরে সংরক্ষিত পর্তুগিজ রাজার হৃদপিণ্ড, পাড়ি দিল ব্রাজিলে

১৮৩৪ সালের কথা। মৃত্যুশয্যায় পর্তুগালের রাজা প্রথম ডম পেদ্রো। শরীরে থাবা বসিয়েছে মারণরোগ যক্ষ্মা। মৃত্যুশয্যায় শুয়ে প্রিয়জনদের কাছে এক অদ্ভুত আব্দার করেছিলেন ৩৫ বছর বয়সি সম্রাট। ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন মৃত্যুর পর যেন তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করে বার করে আনা হয় তাঁর হৃদপিণ্ড। পৃথকভাবে সেটি যেন সংরক্ষণ করা হয়। 

হ্যাঁ, শেষ পর্যন্ত মৃত্যুপথযাত্রী সম্রাটের শেষ ইচ্ছেকে মান্যতা দিয়ে হয়েওছিল তেমনটা। রাজা প্রথম ডম পেদ্রোকে (Dom Pedro I) সমাধিস্থ করা হলেও, তাঁর হৃদপিণ্ড (Heart) পৃথকভাবে সংরক্ষিত করা হয়েছিল ফর্মালিনের জারে। তারপর পেরিয়ে গেছে ১৮৮ বছর। পোর্তো শহরের লেডি অফ লাপা গির্জায় এতদিন সংরক্ষিত ছিল সেই হৃদপিণ্ড। এবার তা পাড়ি দিল ব্রাজিলের উদ্দেশ্যে। লাতিন আমেরিকার দেশটির ২০০তম স্বাধীনতা দিবসে স্মারক হিসাবেই এই হৃদপিণ্ড দান করল পর্তুগিজ সরকার। 

আসলে পর্তুগিজ সম্রাট হলেও, ব্রাজিলের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছেন প্রথম ডম পেদ্রো। ডম পেদ্রোর জন্ম ১৭৯৮ সালে পর্তুগালের রাজ পরিবারে। তখন ব্রাজিল পর্তুগিজ উপনিবেশ। রাজার আসনে ডম পেদ্রোর বাবা রাজ ষষ্ঠ জন। জন্মের ঠিক কয়েক বছরের মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে সপরিবারে ব্রাজিলে পাড়ি দেন তিনি। কারণ, পর্তুগাল আক্রমণ করতে চলেছে নেপোলিয়নের বাহিনী, সে-খবর আগেই পৌঁছেছিল তাঁর কাছে। 

এর পর প্রায় দু’দশক ব্রাজিলে থেকেই রাজত্ব করেছেন রাজা ষষ্ঠ জন। ডম পেদ্রোর বেড়ে ওঠাও সেখানে। ১৮২১ সালে ষষ্ঠ জন পর্তুগালে ফিরে গেলে, ২২ বছর বয়সি সন্তানকে ব্রাজিলের শাসকের পদে নিযুক্ত করেন। তবে অন্যান্য ঔপনিবেশিক শাসকদের থেকে খানিক ভিন্ন ছিলেন পেদ্রো। শোষণের নীতিতে বিশ্বাস ছিল না তাঁর। যে মাটিতে তাঁর বড়ো হয়ে ওঠা, সেই ব্রাজিলের স্বাধীনতার জন্যই প্রথম দাবি তুলেছিলেন তিনিই। 

অবশ্য পর্তুগিজ সংসদ তাঁর ইচ্ছেকে সেভাবে আমল দেয়নি। এমনকি পর্তুগালে তাঁর ফিরে আসার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছিল সংসদ। অবশ্য তাতে এমন কিছু প্রভাব পড়েনি পেদ্রোর পরিকল্পনায়। ১৮২২ সালে ষষ্ঠ জনের মৃত্যুর পর পর্তুগালের রাজ সিংহাসনে বসেন পেদ্রো। আর তার ঠিক পরেই ব্রাজিলকে তিনি মুক্ত করেন পরাধীনতার গ্লানি থেকে। 

অবশ্য বাকি জীবনটা খুব একটা সুখকর ছিল না পেদ্রোর। প্রথমত, মারণ রোগ যক্ষ্মার থাবা। তার ওপরে তাঁকে অসুস্থ অবস্থাতেই লড়াই করতে হয়েছিল পর্তুগিজ সিংহাসনে নিজের মেয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। শেষে অকালমৃত্যু। 

তবে নিজের দেশের মানুষের ভালোবাসা না পেলেও, সে-সময় তাঁকে একপ্রকার ঈশ্বরের অবতার বলেই মনে করতেন ব্রাজিলের মানুষ। আজও ব্রাজিলে তিনি পরিচিত ‘দ্য লিবারেটর’ নামে। ১৯৭২ সালে ১৫০তম স্বাধীনতা দিবসে তাঁর সমাধিস্থ দেহাবশেষ পর্তুগিজ সরকার স্মারক হিসাবে প্রদান করেছিল ব্রাজিলকে। যা বর্তমানে সংরক্ষিত রয়েছে সাও পাওলোতে। এবার ব্রাজিলের ২০০ বছরে সে-দেশে পাড়ি দিল ‘মুক্তিদাতা’-র হৃদপিণ্ড…

Powered by Froala Editor