গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার সন্ধেবেলায় দুবাই ফেরতা এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানটি সম্মুখীন হয় দুর্ঘটনার। কোঝিকোড়ের কারিপুর বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়েতে পিছলে যায় চাকা। রানওয়ে পেরিয়ে ছিটকে যায় তার বাইরের খাদে। দু’টুকরো হয়ে যায় এয়ার ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেস ফ্লাইট বিমানটি। বিমানে ছিলেন পাইলট, কেবিন ক্রু-সহ মোট ১৯১ জন যাত্রী। তবে বিমানটি ভেঙে পড়লেও আগ্নিসংযোগ হয়নি। ফলে যাত্রীদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
শেষ পাওয়া খবর, কেরলে বিমান দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭। তবে সরকারি সূত্র বাদ দিলে অসমর্থিত সূত্রের দাবি, মৃতের সংখ্যা ১৯। বিমানের দুই পাইলটই নিহত। মৃত্যু হয়েছে স্থানীয় এক ব্যক্তির। এছাড়াও যথেষ্ট আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি বহু মানুষ। বাড়তে পারে মৃতের সংখ্যা, বাড়ছে আশঙ্কাই।
কেন্দ্রীয় বিমান পরিবহণ সংস্থা ইতিমধ্যেই দুটি তদন্ত দল গঠন করেছে। রাতেই তারা রওয়ানা দিয়েছে কেরলের উদ্দেশ্যে। যদিও প্রাথমিকভাবেই যতটুকু বোঝা গেছে বৃষ্টির জন্যই এই দুর্ঘটনা। বিগত কয়েকদিন ধরেই একটানা ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির জন্য কেরল বিমানবন্দরে দৃশ্যমানতার সমস্যা হচ্ছিলই। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটিও অবতরণের আগে দু’বার নামার চেষ্টা করেছিল রানওয়েতে। কিন্তু সম্ভব হয়নি অবতরণ। বিমানবন্দরকে দু’বার প্রদক্ষিণ করে তৃতীয় প্রচেষ্টায় বিমানের চাকা মাটি স্পর্শ করলেও শেষ মুহূর্তে পিছলে যায় বিমানটি।
এইধরণের দুর্ঘটনার তদন্তে প্রথমেই দেখা হয় বিমানচালকের মানসিক স্থিতির পরিমাণ এবং তাঁর অভিজ্ঞতা। দেখা হয় তিনি আত্মহত্যাপ্রবণ ছিলেন কিনা। প্রথম বিষয়টা নিয়ে বলতে গেলে বিমানের পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন দীপক শেঠ। দীর্ঘদিন যিনি কাজ করেছেন ভারতীয় বিমানবাহিনীতে। সুতরাং দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কথা না। দু’বার অবতরণের চেষ্টা এবং প্রদক্ষিণ করাও ইঙ্গিত দেয়, মানসিক অবস্থা যথেষ্টই স্থিতিশীল ছিল তাঁর। এছাড়াও দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ব্ল্যাকবক্স থেকে দেখা হয় কোনো যান্ত্রিক গোলোযোগ ছিল কিনা। অবশ্যই তার জন্য বিশেষজ্ঞের মতামতের প্রয়োজন।
আরও পড়ুন
প্রথম বাঙালি যুদ্ধবিমান চালক তিনি, মৃত্যুর আগে ধ্বংস করেছিলেন শত্রুপক্ষের ৯টি বিমান
কিন্তু এসবের বাইরেও স্বাভাবিকভাবেই আরও একটি বিষয় বারবার উঠে আসছে সামনে। তা হল কেরলের এই বিমানবন্দরের ওয়ান-জিরো রানওয়ে। প্রথমত এটি একটি ঢালু রানওয়ে। দ্বিতীয়ত, রানওয়ের ঠিক পরেই ২০০ মিটার গভীর খাদ। এই বিষয়টি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নজরে থাকলেও তা এতদিন কেন এড়িয়ে গেলেন তাঁরা? পাশাপাশিই বৃষ্টির সময় রানওয়ে পিচ্ছিল হলে ব্যবহৃত হয় অটোমেটিক ব্রেকিং সিস্টেম। যা বিমানের চাকায় একবারে বল না প্রয়োগ করে ধীরে ধীরে বল প্রয়োগ করে। ফলে বিমান থামতে দেরি হওয়ার কারণে দরকার পড়ে লম্বা রানওয়ে। কেরলের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রানওয়ের বাইরেই চলে যায় বিমানটি।
সেক্ষেত্রে কি রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়ানো দরকার ছিল? কিন্তু এখানেই শুরু নয়। এর আগেও কেরলের এই বিমানবন্দরে বিমান পিছলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২০১২ এবং ২০১৭-এর সেই ঘটনা থেকে কিছুই কি শিখতে পারেনি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ? নাকি প্রাণহানি হয়নি বলেই স্রেফ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই দুর্ঘটনাগুলো? ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি প্রয়োজন মতো, এই প্রেক্ষাপটে উত্তর হাতড়াচ্ছেন সকলেই। সেই সঙ্গেই জেগে থাকছে ভবিষ্যতেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা...
আরও পড়ুন
খোঁজ মেলেনি কোনোদিন, আকাশেই হারিয়ে যাওয়া প্রথম পাঁচটি বিমানের হদিশ
Powered by Froala Editor