বাংলা, বিহার, কেরল-সহ একাধিক রাজ্যেই গত মাসে চলেছিল নির্বাচন পর্ব। বাদ ছিল না উত্তরপ্রদেশও। করোনা পরিস্থিতিতে এই নির্বাচন যে দ্বিতীয় তরঙ্গের আঘাতের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। তা নিয়ে বিতর্কও দানা বেঁধে দেশজুড়ে। তবে শোচনীয় অবস্থা যোগীর রাজ্যে। প্রতিটি বুথকেন্দ্র এবং পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলিই যেন হয়ে উঠেছিল কোভিডের হটস্পট। তেমন তথ্যই প্রকাশ্যে এল এবার।
বিগত এপ্রিল মাসে চার দফায় পঞ্চায়েত ভোট আয়োজিত হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। আর চার দফার এই নির্বাচনে পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব সামলেছিলেন সব মিলিয়ে প্রায় তিন লক্ষাধিক শিক্ষক। শুধু নির্বাচন চলাকালীন সময়েই তাঁদের মধ্যে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬২১ জন। যার মধ্যে রয়েছেন ৩০ জন নন-টিচিং স্টাফও। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে উত্তরপ্রদেশের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন।
অধিকাংশ শিক্ষকদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, প্রশিক্ষণকেন্দ্র গিয়েই আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা। তবে তাঁদের অসুস্থতার পরেও ন্যূনতম সহানুভূতি দেখায়নি সরকার কর্তৃপক্ষ। উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরেও কোভিড টেস্ট কিংবা অন্য কোনোরকম সহায়তা করা হয়নি। বরং, তাঁদের বাধ্য করা হয়েছিল বুথে কর্তব্যপালনের জন্য। এমনকি কিছু পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আক্রান্ত শিক্ষক আইসিইউ-তে থাকার সময়ও ক্রমাগত ফোনে হুমকি এসেছে, তাঁদের কাজে ফেরানোর জন্য। ভয় দেখানো হয়েছে এফআইআরের।
বিগত ১৪ মে, সরকারের কাছে আটটি দাবি নিয়ে চিঠি পেশ করে উত্তরপ্রদেশের শিক্ষক সংগঠন। আবেদন করা হয়, কোভিডে মৃত শিক্ষকদের যেন ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে সরকার। পাশাপাশি পরিবারের কোনো সদস্যকে যেন চাকরি দেওয়া হয়। মামলা করা হয়েছিল এলাহাবাদ উচ্চ আদালতেও। আদালতের পক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়। পাশাপাশি স্পষ্টভাবে আদালত জানিয়ে দেয়, অনিচ্ছা সত্ত্বেও বহু শিক্ষককে পোলিং ডিউটিতে বাধ্য করা হয়েছে। তবে এসবের পরেও থেকে যাচ্ছে সংশয়। কারণ, যোগী প্রশাসনের দাবি নির্বাচনে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ৩ জন শিক্ষকের। সরকারের এই মন্তব্যকে লজ্জাজনক বলেই তোপ দেগেছে উত্তরপ্রদেশের শিক্ষক সংগঠন। তথ্য কারচুপির অভিযোগও আনা হয়েছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন
গঙ্গাতীরে গণকবর, দেশের করোনা-পরিস্থিতির প্রতিফলন উত্তরপ্রদেশে?
বর্তমান সময়ে করোনা পরিস্থিতিতে বার বার উঠে আসছে উত্তরপ্রদেশের কথা। অভিযোগ উঠছে চূড়ান্ত অব্যবস্থার। যমুনা কিংবা গঙ্গায় ভাসমান মৃতদেহই হোক কিংবা অক্সিজেন-হাসপাতাল শয্যার সংকট— উত্তরপ্রদেশের প্রান্তিক অঞ্চলের পরিস্থিতি সত্যিই শোচনীয়। এবার আরও একবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল যোগীর রাজ্য। প্রায় ২২ কোটি মানুষের বসবাস উত্তরপ্রদেশে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার এবং অন্যান্য কার্যকলাপই ভারতের সর্বোচ্চ জনবহুল রাজ্যের প্রান্তিক অঞ্চলেও ছড়িয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস। মহামারীর পরিস্থিতিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া এড়িয়ে গেলে হয়তো এমন পরিণতি দেখতে হত না উত্তরপ্রদেশকে…
আরও পড়ুন
মজবুত করতে হবে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, করোনা-মোকাবিলায় নিদান চিকিৎসকদের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
লোহার ফুসফুস নিয়েই ৬৮ বছর, করোনায় সন্ত্রস্ত আলেকজান্ডার