মিছিলে সামিল হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কারোর হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘পেসেন্ট বিফোর প্রফিটস’। আবার কোথাও চোখে পড়ল ‘সেফ স্টাফিং’ পোস্টার, ‘উই আর দ্য নার্সিস্টস’ স্লোগান উঠল রাজপথে। সম্প্রতি এমনই এক অদ্ভুত দৃশ্যের সাক্ষী হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (US) মিনেসোটা (Minnesota) অঙ্গরাজ্য। না, সাধারণ নাগরিক নয়, এই মিছিলে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁরা সকলেই বাস্তবের সুপারহিরো। সকলেই স্বাস্থ্যকর্মী (Health Workers)।
স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত কর্মীদের বেতনবৃদ্ধি এবং যথাযথ কর্মীনিয়োগের দাবিতেই এই প্রতিবাদ মার্কিন চিকিৎসাকর্মীদের। একপ্রকার বাধ্য হয়েই স্বাস্থ্য দপ্তর ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিপক্ষে এবার আন্দোলনের পথ বেছে নিলেন ১৬টি হাসপাতালের ১৫ হাজারেরও বেশি মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মী, মূলত নার্সরাই। গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে ৩ দিনের স্বাস্থ্য-ধর্মঘট (Strike)। চলবে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটাই সম্ভবত সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য-ধর্মঘট।
তবে আজ নয়, বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন বৃদ্ধির দাবি উঠেছিল মার্কিন মুলুকে। পাঁচ মাস আগেই শুরু হয়েছিল নতুন চুক্তিপত্র তৈরির কাজ। তবে লাল সুতোর ফাঁসে জড়িয়ে আছে সেই প্রক্রিয়া। বিগত পাঁচ মাস ধরে কোনোরকম চুক্তি ছাড়াই কাজ করে চলেছেন কয়েক হাজার স্বাস্থ্যকর্মী। পাশাপাশি চিকিৎসাকর্মীদের ইউনিয়নের দাবি, যথাযথ কর্মী নিয়োগ করছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ, বর্তমানে গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই ধুঁকছে জনবল সংকটে। ফলে, কর্মরত চিকিৎসাকর্মীদের ওপর ক্রমশ বাড়ছে কাজের চাপ। নির্ধারিত সময়ের বাইরে তাঁদের কাজ করতে হলেও, কোনোরকম বাড়তি বেতন দেওয়া হচ্ছে না তাঁদের।
অবশ্য, এটাই বিক্ষোভের একমাত্র কারণ নয়। নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা কম থাকায় যথাযথ স্বাস্থ্য পরিষেবা পাচ্ছেন না রোগীরাও। এমনটাই অভিযোগ চিকিৎসাকর্মীদের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ হাসপাতাল ও চিকিৎসাক্ষেত্রই মূলত বেসরকারি কর্মসংস্থানের অন্তর্গত। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠা মিনেসোটার ১৬টি হাসপাতালও আদতে বেসরকারি হাসপাতালই। স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, কেবলমাত্র মুনাফার জন্য একদিকে যেমন প্রতারণা করা হচ্ছে তাঁদের সঙ্গে, তেমনই রোগীদের যথাযথ পরিষেবা প্রদান করছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তিন দিনের এই ধর্মঘটে অন্ততপক্ষে ১৩টি হাসপাতালের পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে বিঘ্নিত হয়েছে বলেই দাবি জানাচ্ছে একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম। প্রশ্ন থেকে যায়, স্বাস্থ্যকর্মীদের এই বিক্ষোভ কি আরও সংকটের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে না রোগীদের? তবে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে এই পথ বেছে নিতেই বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। সম্প্রতি চিকিৎসাকর্মী ও মিনেসোটার সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষগুলির মধ্যে মধ্যস্থতার কাজে নেমেছে টুইস সিটিস হসপিটার গ্রুপ। এখন দেখার কত দ্রুত সমাধান হয় এই সমস্যার…
Powered by Froala Editor