বিশ্বব্যাপী লকডাউনের জেরে অর্থনীতির অবস্থা বেহাল। জরুরি ওষুধপত্র এবং চিকিৎসা সামগ্রী ছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রায় বন্ধ। কিন্তু এর মধ্যেও থেমে নেই বেআইনি ব্যবসার কারবারিরা। বরং এই সুযোগটাই তারা ব্যবহার করে নিতে চাইছে। সম্প্রতি মেক্সিকোয় একটি কাছিম পাচারকারী দলের ধরা পড়ার ঘটনায় এই কথাই প্রমাণ হচ্ছে।
মেক্সিকো থেকে চিনের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল একটি মালবাহী জাহাজ। আর তাতেই ১৫৮টি কাঠের বাক্সে বন্দি ছিল ১৫০০০ স্বাদু জলের কাছিম। এইসব কাছিমের মধ্যে ছিল বেশ কিছু বিরল প্রজাতির কাছিমও। বাক্সগুলি দেখে কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হওয়ামাত্র সেগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়। এবং বাক্সের ডালা খুলতেই বেরিয়ে আসে ভিতরের রহস্য। স্পষ্টতই পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এই কাছিমদের। কর্তৃপক্ষ তাদের উদ্ধার করার আগেই বাক্সের মধ্যে ২৬০টি কাছিমের মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের অবশ্য নিরাপদ বাসস্থানে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জলবায়ুর পরিবর্তন এবং জলে প্লাস্টিক দূষণ তো আছেই। এই দ্বিমুখী আক্রমণে ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে বহু জলচর প্রাণী। তার মধ্যেই আরেক বিপদ হয়ে উঠেছে মানুষের সীমাহীন লোভ। বিপন্ন প্রাণীদের নির্বিচারে লুঠ ও হত্যা করতেও পিছপা হচ্ছে না মানুষ। আইনি নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ক্রমশ বেড়ে চলেছে ব্যবসা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সাল থেকে কাছিম ব্যবসার উপরে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকার সরকার। কিন্তু তার পরেও বেআইনি ব্যবসা চলেছে নিজের মতোই। পরবর্তী দুই দশকে আমেরিকা থেকে অন্তত পাঁচ কোটি কাছিম পাচার হয়ে গিয়েছে বিদেশে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাচার ঘটেছে চিনে। শুধু কাছিম নয়, বেআইনি প্রাণীর ব্যবসার বেশ বড়সড় একটি বাজার আছে চিনে। তাদের মাংসের এবং বিভিন্ন দেহাংশের দাম রীতিমতো অবাক করার মতো। চিনের ভেষজ ওষুধ তৈরির অনেক উপাদান আসে এইসব প্রাণীর নিষিদ্ধ ব্যবসা থেকে।
সম্প্রতি পৃথিবীর সর্বত্র প্রাণী সংরক্ষণের দাবি উঠছে। মানুষ ক্রমশ সচেতন হচ্ছে। বিরল প্রাণীদের বাঁচাতে না পারলে যে বাস্তুতন্ত্রের সমূহ ক্ষতি হবে, সেবিষয়ে চিন্তিত অনেকেই। এর মধ্যেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেআইনি পাচারের সংখ্যা। ঠিক যেন মানুষের চরিত্রের একটি স্ববিরোধ। এই সমস্ত ব্যবসা রুখতে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির উপরেও জোর দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন।