২০১৯ সালের শেষের দিকে চিনে প্রথম প্রাদুর্ভাব হয় করোনাভাইরাসের। কয়েক মাসের মধ্যেই সেই মারণ ভাইরাস থাবা বসায় গোটা বিশ্বজুড়ে। বাধ্য হয়েই লকডাউনের পথে হেঁটেছিল পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশই। ভয়াবহ বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। আর তার জেরেই দেখা দিয়েছে ভয়াবহ খাদ্যসংকট। মহামারীর প্রকোপ কমলেও বিগত এক বছরে ন্যূনতম উন্নতি হয়নি পরিস্থিতির। সম্প্রতি এমনি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আনল জাতিসংঘ (UN)।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে অনাহারে (Starved) রয়েছেন প্রায় ১৫ কোটি মানুষ। তাছাড়াও অপুষ্টির শিকার আরও ৮২.৮ কোটি। গত বছরের তুলনায় যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪.৬ কোটি। এই হার স্বাভাবিকের থেকেও তিনগুণ বেশি বলেই জানাচ্ছে জাতিসংঘ। প্রশ্ন থেকে যায়, মহামারীর প্রকোপ কমে আসার পরেও কেন বদলাল না পরিস্থিতি?
এক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ এবং হিংসার দাপটকেই দায়ী করছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। ইউক্রেন-রুশ যুদ্ধ থেকে শুরু করে আফ্রিকার একাধিক দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি, আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতা-লাভ, প্যালেস্তাইন-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব— একাধিক সামরিক সংঘাতের কারণে সার্বিকভাবে মূল্য বেড়েছে সারের। সেইসঙ্গে হ্রাস পেয়েছে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ। রপ্তানি বন্ধ করেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী দেশ ইউক্রেন। পাশাপাশি জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিও খাদ্য পরিবহনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকক্ষেত্রেই। ফলে দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলি। অন্যদিকে অর্থনীতি বিধ্বস্ত হওয়ায় অনুদানও কমিয়েছে ক্ষমতাশীল প্রথম বিশ্বের দেশগুলি। ফলে খাদ্য বঞ্চনার শিকার তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশ।
তবে এখানেই শেষ নয়। ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্টের অনুমান, ২০৩০ সালের মধ্যে চরমে পৌঁছাবে এই খাদ্য সংকট। অপুষ্টির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে আরও ৬৭ কোটি। আর তার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে জলবায়ু পরিবর্তন। অনাহারের থাবা বসবে ভারতেও, তেমনটাই আশঙ্কা আন্তর্জাতিক সংস্থার। ভারতে ২০৩০ সালের মধ্যে খাদ্য সংকটে পড়তে পারেন ৯ কোটি মানুষ।
আরও পড়ুন
খাদ্যের জন্য অক্টোপাস 'চাষ'! শুরু বিতর্ক
দুর্ভিক্ষের এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথম বিশ্বের দেশগুলিকেই এগিয়ে আসতে আহ্বান করছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা। কিন্তু যুদ্ধ, হানাহানি না থামলে আদৌ কি তহবিল গঠন করেও লাভ হবে কোনো? প্রশ্নচিহ্ন ঝুলে রয়েছে সেখানেই…
আরও পড়ুন
শীত পড়তেই চরম খাদ্য সংকটে আফগানিস্তান, বাড়ছে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মহাকাশ-ফেরত ধানের চাষ চিনে, ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট মেটাবে এই ‘স্বর্গীয় চাল’