মে মাসে কাজ হারিয়েছেন দেড় কোটি ভারতীয়, স্বাধীনতার পর এই প্রথম

প্রথম তরঙ্গের চেয়ে আরও অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে করোনা অতিমারীর দ্বিতীয় তরঙ্গ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিপর্যস্ত সারা দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। তবে আশা করা হয়েছিল আগের বছরের থেকে শিক্ষা নিয়ে এইবছর অর্থনীতির ক্ষেত্রে অন্তত কিছু সচেতন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বাস্তবে যে তা একেবারেই সফল হয়নি, সেটাই প্রমাণ হল সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে। এক বছরে দেশের জিডিপি-র সংকোচন ঘটেছে ৭.৩ শতাংশ। বিগত ৪০ বছরে এমন ঘটনা কোনোদিন ঘটেনি। আর সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বেকারত্ব। সম্প্রতি সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির সাপ্তাহিক পর্যালোচনায় উঠে এল সেই বিষয়টিই। পরিসংখ্যান বলছে, শুধু মে মাসেই সারা দেশে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ।

শুধুই মে মাসে নয়, এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই কর্মীছাঁটাই শুরু হয়েছে নানা ক্ষেত্রে। সিএমআইই-র পরিসংখ্যান বলছে এপ্রিলের গোড়াতে দেশে মোট কর্মসংস্থান ছিল ৪০০.৭ মিলিয়ন। মে মাসের শেষে সেই সংখ্যাটা এসে দাঁড়িয়েছে ৩৭৫.৫ মিলিয়নে। অর্থাৎ এই দুই মাসে কাজ হারিয়েছেন ২ কোটি ৫০ লক্ষের বেশি মানুষ। সাম্প্রতিক সময়ে তো বটেই, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এত বেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনাও নজিরবিহীন। এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। গতবছর কেন্দ্রীয় লকডাউনের ফলে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছিল, এ-বছর তার পুনরানৃত্তি হবে না বলেই জানিয়েছিল প্রশাসন। সঙ্গত কারণেই এবারে কেন্দ্রীয় লকডাউনের পথে হাঁটেনি সরকার। কিন্তু সংক্রমণ রুখতে আঞ্চলিকভাবে নানা রাজ্যে শুরু হয়েছে লকডাউন। আর তার ফলেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অর্থনীতি।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন দ্বিতীয় তরঙ্গ প্রায় বিদায় নিতে চলল। অতএব আবারও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু এই বাস্তবতায় যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠে এল, তা হল দেশের কর্মসংস্কৃতিতে অসংগঠিত শ্রমিকের আধিক্য। সামাজিক নিরাপত্তার নানা বিষয় থেকেই বঞ্চিত হন অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মচারীরা। আর তাই অতিমারী পরিস্থিতিতেও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার নানা প্রকল্পও ব্যর্থ হয়েছে। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এটা যথেষ্ট আশঙ্কার দিক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি রেল, বিমান সহ নানা সরকারি ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণের ফলে অসংগঠিত শ্রমিকের সংখ্যা আরও অনেকটাই বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। ফলে আগামীদিনে অর্থনীতিকে ধরে রাখতে গেলে এই বিষয়ে সরকারকে চিন্তা-ভাবনা করতেই হবে। অতিমারী পরিস্থিতি আবারও সেই প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিই তুলে ধরল।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অতিরিক্ত সময় কাজ করায় মৃত্যু ৭ লক্ষাধিক কর্মীর, জানাচ্ছে হু-এর সমীক্ষা