দারিদ্র্যে ধুঁকছে দেশ, অন্যদিকে বিলিয়নিয়ারের তালিকায় ১৫ জন নতুন ভারতীয়

স্বাধীনতার পর থেকে এমন বেহাল অর্থনীতি ভারতবাসী দেখেনি। জিডিপি নেমেছে ৪০ বছরের ইতিহাসের রেকর্ড নিম্নতায়। সৌজন্যে করোনা ভাইরাস। কিন্তু তাতে কী? এই আকালেও ফুলে ফেঁপে উঠছে কিছু মানুষের সম্পদের পরিমাণ। মহামারী পরিস্থিতিতে এই বৈষম্যের ছবিই উঠে এল ফোর্বস পত্রিকার ‘রিয়েল টাইম বিলিয়নিয়ার’ তালিকায়। সেখানে নতুন করে জায়গা করে নিলেন ১৫ জন ভারতীয়।

সারা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের নাম নিয়ে তৈরি এই তালিকা। এখানে প্রত্যেকের সম্পত্তিই ১০০ কোটির উপরে। টাকা নয়, ডলার। অর্থাৎ বর্তমান হিসাবে যার মূল্য দাঁড়ায় ৭৩৬১ কোটি টাকা। আর একজন-দুজন নন, ভারতের ১১৭ জন শিল্পপতি এর থেকেও বেশি সম্পদের অধিকারী। এমনটাই জানাচ্ছে ফোর্বস পত্রিকা। মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সেই তালিকায় ছিল ১০২ জন ভারতীয়ের নাম। অর্থাৎ এর মধ্যে আরও ১৫ জন শিল্পপতির সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই তালিকার শীর্ষে আছেন মুকেশ আম্বানি। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৮৮০২ কোটি ডলার। সারা বিশ্বে তিনি ষষ্ঠ ধনী ব্যক্তি। শুধু ভারত নয়, এশিয়াতেই তাঁকে টেক্কা দেওয়ার মতো কেউ নেই। আর এর পরেই আছে এইচসিএল-এর কর্ণধার শিব নাদালের নাম। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ২০৬০ কোটি ডলার। পর্যায়ক্রমে রয়েছেন আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি, কোটাক মহিন্দ্রা গ্রুপের কর্ণধার উদয় কোটাক, ডিমার্ট-এর কর্ণধার রাধাকৃষ্ণ দামানি ও তাঁর পরিবার, সিরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার সাইরাস পুণাওয়ালার মতো ব্যবসায়ীরা। আর তালিকার একেবারে শেষে থাকা ওয়েলস্প্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান বালকৃষ্ণ গোয়েঙ্কার সম্পদের পরিমাণ সবে ১০০ কোটি ছুঁয়েছে। এই ১১৭ জন ভারতীয়ের মোট সম্পদের পরিমাণ যোগ করলে দাঁড়ায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। অথচ প্রদীপের নিচেই যেমন অন্ধকার, ভারতের অবস্থাও ঠিক তাই।

এই ৬ মাস ধরে আমরা সাক্ষী থেকেছি অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিকের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের। যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতায় পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন কেউ কেউ। পথ-দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। সেইসব রক্ত লেগে আছে রাস্তার ধারে। সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা কর্মী ছাঁটাই করেছে নির্বিচারে। দারিদ্র্যের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন অনেকেই। শুধু ইন্টারন্যাশানাল লেবার অর্গানাইজেশনের সমীক্ষাই বলছে এই সময়ের মধ্যে সারা দেশে ৪১ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। প্রকৃত সংখ্যাটা সম্ভবত আরও বেশি। অথচ এই মহামারীর সুযোগেই ধনী থেকে আরও ধনী হয়ে উঠেছেন কেউ কেউ।

আরও পড়ুন
গ্রেপ্তার রিয়া চক্রবর্তী; টিআরপি-র লড়াইয়ে পিছনের সারিতে অর্থনীতি থেকে বেকারত্ব

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে নাগরিক জনজীবন ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে টেলিকমিউনিকেশন এবং ইলেক্ট্রনিক গেজেটের চাহিদা বেড়েছে অস্বাভাবিক। আবার মানুষের অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়েছে ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলিও। এভাবেই ক্রমশ বৈষম্য আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের অবস্থা ক্রমশ শোচনীয় হয়ে পড়েছে। কিছুটা লাভের আশায় শেয়ার মার্কেটের দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। আবার শেয়ার মার্কেটে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ বাড়লে প্রকৃতপক্ষে লাভবান হচ্ছেন শিল্পপতিরাই।

এই বৈষম্যকে খানিকটা স্থিতিশীল অবস্থায় আনতে অতি-বিত্তশালীদের জন্য বেশি ট্যাক্স বসানোর আবেদন জানিয়েছেন অনেক অর্থনীতিবিদই। বলা বাহুল্য, সরকার সেই আবেদনে সাড়া দেননি। অন্যদিকে রেল বা বিমানের মতো সরকারি পরিষেবাগুলি ক্রমশ বেসরকারি হাতে ছেড়ে দেওয়ার ফলে বৈষম্যের চেহারা আরও প্রকট হবে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এবার হয়তো সত্যিই ভারতের সংবিধান থেকে ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দটা বাদ দেওয়া প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। অন্তত দেশের বাস্তব চেহারা তো এই বিশেষণের বিপরীত চরিত্রই প্রকাশ করছে।

আরও পড়ুন
লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব আর বেসরকারিকরণ; অর্থনীতি কি দিশাহীন হয়ে পড়ছে ক্রমশই?

Powered by Froala Editor

More From Author See More