আরও একবার সবুজ সংকেত দেওয়া হল পরিবেশ ধ্বংসযজ্ঞে। পরিবেশ, অরণ্য এবং জলবায়ু মন্ত্রালয় সম্প্রতি দক্ষিণ-পশ্চিম রেলকে ডবল ট্র্যাকিং প্রকল্পের ছাড়পত্র দিল। আর সেই কারণেই কাটা হবে গোয়ার ১৪০ হেক্টর জমির অরণ্য। যার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ গোয়ার ভগবান মহাবীর ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি এবং মোল্লেম জাতীয় উদ্যান।
উত্তর কর্ণাটকের ক্যাসেল রক থেকে দক্ষিণ গোয়ার কুলেম রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ডবল ট্র্যাকিংয়ের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১২১ হেক্টর জমি। গত ৪ ফেব্রুয়ারি গোয়ার অরণ্য বিভাগের প্রধান সচিব প্রাথমিক পর্যায়ের ছাড়পত্র দিয়েছিলেন এই প্রকল্পে। সম্প্রতি তাতেই শীলমোহর চাপান হয় কেন্দ্র থেকে। তাছাড়াও দক্ষিণ ৮গোয়ার কুলেম থেকে মারাগাঁও রেলস্টেশনের মধ্যে ডবল ট্র্যাকিংয়ের জন্য ছাঁটা হবে আরও ১৮ হেক্টর জমির অরণ্য।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ডবল ট্র্যাকিং প্রকল্পের পাশাপাশি জাতীয় সড়ক-সহ চারটি এক্সপ্রেসওয়ে এবং গোয়া-ইয়ামার বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন প্রকল্পের জন্য আগেই বননিধনের নিদান দিয়েছিল প্রশাসন। এখন প্রশ্ন উঠছে, তিন দফার এই প্রকল্পগুলিতে আদৌ কি সুবিধা মিলবে স্থানীয় বাসিন্দাদের? স্থানীয়দের বক্তব্য একেবারেই তেমনটা নয়। মর্মুগাঁও বন্দর থেকে কর্ণাটকে কয়লা পরিবহনকে ত্বরাণ্বিত করাই লক্ষ্য কর্তৃপক্ষের। তাতে বৃহত্তর অর্থে লাভবান হবে কিছু সংস্থা এবং প্রশাসন।
ইতিমধ্যেই আন্দোলনে নেমেছেন গোয়ার পরিবেশকর্মীরা। কেন্দ্রীয় ছাড়পত্রকে আইনত বিরোধিতা করা হবে বলে জানাচ্ছেন গোয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক ক্লড আলভারেজ। উল্লেখ্য, গত বছর থেকেই সরকারি প্রকল্পে বৃক্ষচ্ছেদনের জন্য লাগাতার আন্দোলন চলছে গোয়াতে। উঠে আসছে সরকারি প্রকল্পে কাটা পড়া পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অরণ্যের কথাও। যার মধ্যে রয়েছে বিরল কিছু গাছের প্রজাতিও।
আরও পড়ুন
উত্তরপ্রদেশে রাস্তা নির্মাণের জন্য কাটা পড়বে ১ লক্ষ ৮৯ হাজার গাছ, জানাচ্ছে আরটিআই
তবে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত পরিবেশ ধ্বংসের সম্ভাবনাকে এক কথায় উড়িয়ে দিয়েছেন বললেই চলে। সেইসঙ্গে প্রতিবাদে অংশ নেওয়া অধিকাংশ মানুষই পুরো বিষয়টির সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নয় বলেই দাবি তাঁর। তাঁর বক্তব্য এই প্রকল্পই আপাদমস্তক পাল্টে ফেলবে গোয়ার সামাজিক-আর্থনৈতিক ছবি।
অন্যদিকে ছাড়পত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন ধাতব আকরিক এবং কয়লা পরিবহনের সময় বাধ্যতামূলকভাবে মালবাহী ট্রেনের ওপর থাকতে হবে স্পিল প্রুফ বা সিলিং কভার। যা বর্তমানে ব্যবহৃত হয় না। পাশাপাশি অনুমোদনের তিন বছরের মধ্যে হ্রাসপ্রাপ্ত বনভূমির ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রতি হেক্টর জমিতে রোপণ করা হবে কমপক্ষে হাজারটি গাছ। কিন্তু সত্যিই কি বাস্তবায়িত হবে এইসব প্রক্রিয়া? সেখানেই থেকে যাচ্ছে সন্দেহ। আজও বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন প্রকল্পের জন্য কাটা গাছের ক্ষতিপূরণ পায়নি গোয়া। কিছু পরিমাণ বৃক্ষরোপণ হলেও তা নামমাত্র। সেখানেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, আগের ক্ষত না সারিয়ে কীভাবে নতুন প্রকল্পে শীলমোহর চাপাল কেন্দ্র…
আরও পড়ুন
পরিবেশ বাঁচাতে নতুন প্রযুক্তি, বৃক্ষ-মানচিত্র তৈরি করবে নাসার প্রকল্প
Powered by Froala Editor