লড়াইয়ে শামিল পানিহাটির বান্ধব পাঠাগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছেন সদস্যরাই

গঙ্গার ধারে দাঁড়িয়ে আছে ১২৫ বছর পুরনো একটি ভবন। ইতিহাসের প্রতিটা আঁচড় তার ওপর এসে পড়েছে। এখনও একইভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে নিজের ঐতিহ্য বজায় রেখে। পানিহাটির বান্ধব পাঠাগারের এমনই গরিমা। ১২৫ বছরের মুহূর্তে এবার করোনা প্রতিরোধে এগিয়ে এলেন সেখানকার সদস্যরা। নিজেরাই পাঠাগারে বসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছেন; পরে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে করছেন বাইরে।

আরও পড়ুন
আবিষ্কার মাত্র ৫৪ বছর আগে, অখ্যাত নার্সের তৈরি ‘ফর্মুলা’ই আজ রুখছে সংক্রমণ

তৈরি হয়েছিল ১৮৯৫ সালে। তখন নাম ছিল ‘ফ্রেন্ডস লাইব্রেরি’। সেই ‘ফ্রেন্ড’ই পরে বদলে যায় ‘বান্ধব’-এ। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে গোটা দেশ তখন উত্তাল। সেই ঢেউই জন্ম দেয় এই লাইব্রেরির। শুধু বইয়ের ভাণ্ডার নয়, আসল উদ্দেশ্য ছিল সমাজের তরুণদের এক জায়গায় করা, স্বাধীনতার পাঠ দেওয়া। সেইজন্য লাইব্রেরির সঙ্গে তৈরি হয় ব্যায়ামাগারও। এইভাবেই শুরু হয় পথ চলা। দেখতে দেখতে পেরিয়ে এসেছে ১২৫টি বছর। প্রতি বছর পুজোও হয় ধুমধাম করে। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলার কাজটি এখনও জারি আছে। পানিহাটির অন্যতম ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই বান্ধব পাঠাগার।

আরও পড়ুন
ঘরে-ল্যাবরেটরিতেই তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সৌজন্যে কলকাতার ছাত্রসমাজ

এমন সন্ধিক্ষণের মুহূর্তেই দেশ জুড়ে তৈরি হল ভয়ের পরিস্থিতি। করোনা ভাইরাস নিয়ে সব জায়গায় আতঙ্কের পরিবেশ। জারি হয়েছে লকডাউন। এর মধ্যেই নতুন উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবল বান্ধব পাঠাগার। কথা হচ্ছিল লাইব্রেরির বর্তমান সভাপতি দ্যুতিমান ব্যানার্জি’র সঙ্গে। প্রহরকে তিনি জানালেন, “করোনার এমন পরিস্থিতিতে কী করা যায় সেটাই ভাবা হচ্ছিল। আমাদের বর্তমান সম্পাদকের মাথায় এই স্যানিটাইজার তৈরির বিষয়টি আসে। আমরাও রাজি হই। কাজের সূত্রে তাঁকে বিভিন্ন কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে হয়। সেখান থেকেই নিজে উদ্যোগী হয়ে স্যানিটাইজার তৈরির পদ্ধতি শিখে আসেন। আমরাও সেই অনুযায়ী কাঁচামাল জোগাড় করি। সমস্তটাই করা হয় পাঠাগারের ফান্ড থেকে। তারপর স্যানিটাইজার তৈরি করে আমরা স্বল্প মূল্যে বিক্রি করতে আরম্ভ করি। বিনামূল্যে দিলে কিছু মানুষ হয়ত গুরুত্ব বুঝতে পারবেন না, ফেলে দেবেন। তাই সামান্য কিছু বিনিময় মূল্য রাখা হয়েছে। আস্তে আস্তে এই খবর অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল। এলাকার কয়েকজন এসে কাজে যোগ দিল, অনেকে আমাদের কাছ থেকে কিনলও। সবচেয়ে বড়ো কথা, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের স্যানিটাইজার তৈরি করে দেওয়ার কথাও বলা হয়।”

আরও পড়ুন
বাড়িতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে বাজারে বিতরণ, উদ্যোগে ব্যারাকপুরের তরুণরা

একসময় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সবাইকে একসঙ্গে জড়ো করতে তৈরি হয়েছিল বান্ধব পাঠাগার। আর আজ, সামনে আরও একটা যুদ্ধ। এখানে শত্রু অদৃশ্য; কিন্তু সে যে আছে, তার উপস্থিতি বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছে প্রতি পদে। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিজের মতো করে ময়দানে নেমেছে বান্ধব পাঠাগার। সম্প্রতি এমন উদ্যোগ দেখা গেছে বেশ কিছু জায়গায়। ব্যারাকপুরে কিশোর-তরুণদের উদ্যোগে বাড়িতে তৈরি স্যানিটাইজার বিলি করা হয়েছে নিকটবর্তী বাজারে। কলকাতার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে, একসঙ্গে মাঠে নেমেছি সবাই। যে করেই হোক, এই লড়াইয়ে জিততে হবে। এখানে হার মানে আমাদের সবার হার…

Latest News See More