হাড়ের তৈরি ছোট্ট সরু বাঁশি। কোনোটার আয়তন ৬-৭ সেন্টিমিটার, আবার কোনোটার দৈর্ঘ্য মাত্র ৫ মিলিমিটার। কিছুদিন আগে উত্তর ইজরায়েলে অবস্থিত আয়নান-মালাহার প্রত্নক্ষেত্র থেকে সন্ধানক মিলেছিল এ-ধরনের একগুচ্ছ বাঁশির। তাদের আনুমানিক বয়স ন্যূনতম ১২ হাজার বছর। সম্প্রতি এই বাঁশিগুলির চারিত্রিক বিশ্লেষণে উঠে এল ইতিহাসের এক অজানা অধ্যায়ের ছবি।
আসলে শুধুমাত্র বিনোদন বা সঙ্গীতসৃষ্টির জন্য ব্যবহৃত হত না এই বাঁশিগুলি (Flutes)। বরং, সেগুলি ছিল বন্য পখিদের আকর্ষিত করার হাতিয়ার। হ্যাঁ, প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের সময়ে উঠে এসেছে এমনই আশ্চর্য তথ্য। গবেষকরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি বাঁশিই ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির পাখির কণ্ঠস্বর তৈরি করতে সক্ষম। আকার, আয়তন এবং তাদের ব্যাসার্ধের ওপর নির্ভর করে এইসব বাঁশির কম্পাঙ্ক। অনুমান, শিকার করতে যাওয়ার সময় এই বাঁশি বাজিয়েই পাখিদের আকৃষ্ট করত প্রাচীন মানুষ। তাছাড়াও এই বাঁশির পৃথক সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় গুরুত্ব ছিল বলেই অভিমত প্রত্নতাত্ত্বিকদের।
আনুমানিক ১৩০০০ থেকে ৯৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেদের মধ্যে এই বাঁশিগুলি তৈরি করেছিল প্রাচীন নাটুফিয়ান গোষ্ঠীর মানুষরা। 'র্যাপ্টর কলার'-খ্যাত এই বাঁশি তৈরির জন্য তারা ব্যবহার করত ওয়াটারফাউল বা হাঁস জাতীয় জলচর পাখির হাড়। তবে আজ থেকে ১২ হাজার বছর আগে, কীধরণের সরঞ্জামের ব্যবহারে সূক্ষ্ম এই বাঁশি তৈরি করেছিল প্রাচীন মানুষ, এখনও তার উত্তর পাননি গবেষকরা।
ইজরায়েলের হুলা হ্রদের তীরে অবস্থিত এই প্রাচীন সভ্যতা প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৫৫ সালে। তারপর কেটে গেছে প্রায় সাত দশক। অথচ, আজও সম্পূর্ণভাবে সমাধান হয়নি হুলা হ্রদ রহস্যের। আজও এই প্রত্নক্ষেত্র থেকে আবিষ্কৃত নিত্যনতুন প্রত্নসামগ্রী বিস্ময় জুগিয়ে চলেছে বিশ্ববাসীকে...
Powered by Froala Editor