জলবায়ু পরিবর্তনের জের, ২০৫০-এর মধ্যে বাস্তুচ্যুত হবেন ১২০ কোটি মানুষ!

দু’দশক আগের কথা। ২০০৩ সালে রক্তক্ষয়ী এক সংঘাতের সাক্ষী হয়েছিল সুদানের দারফুর। গৃহযুদ্ধ রূপ নিয়েছিল গণহত্যার। প্রাণ হারিয়েছিলেন ৩ লক্ষ মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন আরও কয়েক লক্ষ। 

এই গণহত্যাকে নিছক রাজনৈতিক ক্ষমতালাভের লড়াই হিসাবে ভাবলে ভুল হবে। আসলে এই বিপুল পরিমাণ জীবনহানির কারণ ছিল জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change)। হ্যাঁ, অবাক লাগলেও সত্যি। সেবছর আকস্মিকভাবে দুই তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছিল বৃষ্টিপাত। সুদান আফ্রিকার দেশ হওয়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সেখানে এমনিতেই কম। তার ওপর খরা আরও সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছিল সাধারণ মানুষকে। কাজ হারিয়েছিলেন কৃষকরা। গোচরণ ভূমির দখল নিতে সহিংহ হয়ে উঠেছিলেন পশুপালকরাও। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল ভূস্বামী এবং দালালদের হস্তক্ষেপে।

তবে শুধু দারফুর গণহত্যাই নয়, আগামীদিনে এ-ধরনের একাধিক বিপর্যয়ের সাক্ষী হবে বিশ্ব। সম্প্রতি এমনই আশ্চর্য ভবিষ্যদ্বাণী করল ইগারাপে ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত গবেষণাপত্র। আগামী ৩ দশক অর্থাৎ, ২০৫০ সালের মধ্যেই বিশ্বের ১২০ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত (Displaced) হবে বলেই অনুমান গবেষকদের। 

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্রমশ প্রভাবিত হচ্ছে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। বদলাচ্ছে বৃষ্টিরেখার অবস্থান। আর সেই কারণেই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্বের কৃষিব্যবস্থা। যে-সকল অঞ্চলে মূলত বর্ষার ফসল বোনা হয়, বৃষ্টির অভাবে শুকিয়ে যাবে সেগুলি। আবার শুষ্ক অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণেও ব্যাহত হবে ফসল উৎপাদন। ফলে, টান পড়বে খাদ্যভাণ্ডারে। কোটি কোটি মানুষ এই পরিস্থিতির কারণে বাস্তুচ্যুত হবে বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা। এই দুর্ভিক্ষের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যাবে সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়ার মতো গ্রেটার হর্ন অফ আফ্রিকার দেশগুলিতে। প্রভাব পড়বে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও। 

তবে এ তো গেল একটি মাত্র আঙ্গিক। তাছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে শুকিয়ে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডার। বিশেষত মেট্রোপলিটন শহরগুলিতে ক্রমশ নিচে নামছে ভূগর্ভস্থ জলের জলতল। এই তালিকায় মোট ১৯টি দেশকে রেখেছেন গবেষকরা। যার মধ্যে রয়েছে প্রথম বিশ্বের একাধিক উন্নত দেশ। 

সবশেষে এই তালিকায় রয়েছে বাড়তে থাকা ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা এবং সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি। গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর হার এভাবেই বাড়তে থাকলে আগামীতে আরও বেশি পরিমাণ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হবে মানুষকে, এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকরা। তাছাড়া ক্রমাগত গলছে মেরু অঞ্চল এবং গ্রিনল্যান্ডের বরফ। চলতি শতকের মাঝামাঝি সময়ে, অর্থাৎ পঞ্চাশের দশকে গ্রিনল্যান্ডের এক চতুর্থাংশ বরফ গলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাজেই তার প্রভাবে সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাবে বেশ কয়েক ইঞ্চি। বাসযোগ্য থাকবে না সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল, বিশেষত দ্বীপরাষ্ট্রগুলি। 

সবমিলিয়ে জলবায়ু সংক্রান্ত একাধিক প্রতিকূলতার কারণে ১২০ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে বলেই অনুমান গবেষকদের। আর এই বিপুল পরিমাণ শরণার্থীর চাপ পড়বে প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতে। তৈরি হবে চরম বিশৃঙ্খলা। আশ্চর্যের বিষয় হল, বছর দুয়েক আগে ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড পিসের গবেষণাতেও উঠে এসেছিল একই তথ্য। সেই রিপোর্টেও বলা হয়েছিল ১২০ কোটি মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার কথা!

Powered by Froala Editor

Latest News See More